১১ জুল, ২০১০

হারবিচ্চারে তোবা কৈরা বল খেলাডা চাড়!

ফুটবল আমার বেলাডে। যদিও খেলাডা আমি সেরাম পারি না...কারন দৌড়াইলে ক্লান্ত লাগে। কিন্তু আমি ছিলাম এককালের মাঠ কাপানো---ম্যানেজার। অনেকে ভাবতে পারেন, ম্যানেজার মাঠ কাপায় ক্যাম্নে ...মাঠতো কাপায় খেলোয়াড় ...মানে স্ট্রাইকার, গুল্কি...হালে "রেফ্রি"...এরা।

হেহে। মিয়া ...কাপাইতে জানলে মাঠের বাইরে থিকাও কাপান যায়। মাঠে আমার পজিশন ছিল...সাইড লাইন বরাবর। উইং ব্যাকের মতো আমি মাঝে মাঝেই চিল্লাইতে চিল্লাইতে উপরে উইঠা জাইতাম...আবার লাইন ধইরা নিচে নাইমা আসতাম। আমার সাফল্য সেরাম। প্রথম বারেই আমি আমার দলরে ফাইনালে পৌছায়া দিছি। ফাইনালে কি কর্ছি সেইটা পরে বলতেছি...উত্তেজিত হইয়েন না, পাঠক।

আগে বৈলা রাখি। এইটা কৈলাম ১০০% সত্যি ঘটনা। আমার হল ফুটবল টিমের পারফরমেন্স মারাত্মক। ১২ বছরে কিছুই জিতে নাই। মাঝে মাঝেই ১১ জনের টীমে শর্ট পরে খেলোয়াড়ের। তো রেগুলার প্লেয়ার হিসাবে আমার রুমমেটকে দেয়া হৈছিল ক্যাপ্তানের দ্বায়িত্ব। সে দ্বায়িত্ব ঘাড়ে নিয়া রুমে আসল বেনসন হাতে লোইয়া। কয় "দোস্ত...বিড়ি খাওয়া এইমাসে ছাইড়া দেওন লাগবো রে...দম বাড়াইতে হোইব"।
-ক্যান দুস্ত?
- ফুটবল খেলা লাগবো...আমি কাপ্তান...তুই ম্যানেজার হবি?
- আলবত। আমিতো খুবি ভাল পারমু কাজটা...যদিও আগে করি নাই।
কাপ্তান মাথা নাড়ায়..."তোর কিছুই করা লাগবো না। তুই খালি সাথে থাক। পোলাপান জোগাড় কর...আমাগো হল টীমে ১১ জন প্লেয়ারি হয় না। আর কাজ বেশি দিনের না...ফাস্ট রাউন্ড পর্যন্ত। তোরে ম্যানেজার নিলাম...কারন কোন শালা খেলার আগের মূহূর্তে ফোন অফ কৈরা ডুব দিলে তোর খেলা লাগব"।
আমার হাড্ডির জয়েন্ট গুলা পটপট কৈরা ফুটা শুরু কর্ল... ভয়ে। ফুটবল খুবি রিস্কি খেলা...তাছাড়া আমার আবার হাড্ডিতে ক্যালসিয়াম কম।

নাইমা পড়লাম প্লেয়ার সংগ্রহে...রাইতে ডাইনিঙ্গে টেবিলে পোস্টার দিলাম...ইতং বিতং...কি লিখছিলাম মনে নাই...কিন্তু খাতা ভৈরা গেল আগ্রহীদের নামে। কাপ্তান রুমমেটরে আইসা রিপোর্ট দিলাম। সে পাশ ফিরা শুইয়া কোইল...
"ভালো...কিন্তু প্রথম ম্যাচ হারার পরে ২য় ম্যাচে কয়জন আইবো...সেইটাই দেখার বিষয়"।
ব্যাপারটা মাথায় ছিলো না। বুয়েটের ছেলেরা হারতে পছন্দ করে না। এরা রণেভংগ দিয়া পালাবে...কিন্তু পরাজয় মানি নিবে না। যাহোক এইবার সিনিয়র ধরতে বাইর হোইলাম। বুয়েট মাঠের পিরামিড ...পারভেজ ভাই আর মধ্য মাঠের কুশলী খেলোয়ার নাহিদ ভাইকে খেলানোর জন্য এদিক উদিক ফুন লাগাইলাম। তেনারা খেলবেন...রাজি হৈলেন।

নাইমা গেলাম প্রস্তুতিতে। প্রস্তুতির চেয়ে বিকালে হলের ফান্ড থিকা ১০টাকা নাস্তাই বেশি ভালো লাগত আমার।

যাহোক, প্রথম ম্যাচ পড়লো গেলবারের চ্যাম্পিয়নদের সাথে। ক্যান...দূর্বল দলকে প্রথম ম্যাচেই চ্যাম্পিয়নদের সাথে খেলতে দেয়া হয়...এইটা আমার মাথায় আসে না। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ হওয়া উচিত এক্স-চ্যাম্পিয়ন ভার্সেস এক্স-রানার আপ। তাইলে টুর্নামেন্টের শুরুতেই একটা চাঙ্গা ভাব চৈলা আসত। আমি ডিএসডাব্লিউ অফিসে গিয়া এই "সুক্ষু ষড়যন্ত্রের" মামলা করমু কিনা ভাবতাছিলাম...লুঙ্গি ছাইড়া প্যান্টো পড়ছিলাম, কিন্তু কাপ্তান আইসা আমারে থামাইলো। কয় এইটাই নাকি "ইন্টারন্যাশ্নাল প্রাক্টিস"। আজিব। সারা দুনিয়াতেই খালি শোষন...দূর্বলরে চড়ায় সবল।

যথা সম্ভব প্রস্তুতি নিয়া প্রথম ম্যাচে নাম্লাম। মানে টীম নামাইলাম। প্রথমার্ধে ফরমেশন ছিল ৯-০-০।মানে সবাই মিলা ডিফেন্স...এক্সেপ্ট পারভেজ ভাই। স্ট্রাইকার পারভেজ ভাই কিন্তু যেনতেন স্ট্রাইকার নন। দূরপাল্লা শটের সাথে তার ছিল ধাক্কায়া ডিফেন্স ভাঙ্গার ক্ষমতা। দূর থেকে তারে পাস দিয়া বল দিতে পারলেই হৈল...আর কাজ নাই।কিছু একটা হৈবই। তিনি হতাশ করেন নাই। হতাশ করে নাই ডিফেন্স। তাগো প্রধান কাজ ছিল...গেঞ্জি মুচড়ায়া ধৈরা রাখা, আর স্ট্রাইকাররে ২/৩বার মাটিতে ফেলায়া দিয়া দম বাইর কৈরা দেয়া। বুয়েট মাঠের এই স্ট্যাটেজি মধ্য মাঠের নাহিদ ভাইয়ের। আমি বরাবরই গান্ধিজী স্টাইলের ফুটবল প্রমোট করছি...অহিংস এবং রক্ষনাত্নক।

আমাদের স্ট্যাটেজি প্রথম ম্যাচে কাজে লাগ্লো। ১-০ গোলে চ্যাম্পিয়ন নজরুল হলকে হারায়া দিলাম। গোল্টা কর্ছিল পারভেজ ভাই।

আজকে আর লেখতে মন চাইতেছে না। শুধু ফাইনালের রেজাল্টটা জানায়া রাখি। ১-০ তে শোচনীয় ভাবে হাইরা গেছিলাম আমরা। অনেকেই ভাবতে পারে ৯০ মিনিটের খেলায় ১-০তে হারকে শুচনীয় বলোনটা ঠিক না। কিন্তু আসল কাহিনী হৈল ৯০ মিনিটে খেলা গোল শুন্য ড্র ছিল। এক্সটা ৩০ মিনিটেও গোল শুন্য। ট্রাইবেকারে...ফলাফল ১-০। না পাঠক। ভূল দেখেন নাই। আমার দল ৫টাই মিস করছিল, আর শেরেবাংলা হল ৪টা।

ওয়ার্ল্ড কাপের স্ট্যাটাস সংকলন পোষ্ট
পাদুকা-গোলক লৈ বেহুদা বাহাসে কাম নাই/ ১মাস পরে দেখপা *** ছাড়া আর কারো নাম নাই!