৮ সেপ, ২০১০

সেক্যুলার বিপ্লবে বাংলাদেশ ও ধার্মিক হাতির পিঠে মাতাল আমেরিকা

শিরোনামটা বেশি ভারী হৈয়া গেল। কিন্তু দ্যাশে ও দুইন্নাতে আসলেই শক্ত পরিবর্তন হৈতেছে। হৈতেই হৈব, কারন আমেরিকা থিকা বাংলাদেশ, সবখানেই পরিবর্তনের/চেঞ্জের/দিন বদলের সরকার।

The Wall Street Journal এ একটা আর্টিকেল ছাপছে আগস্টের ৩০ তারিখে  "Bangladesh's Secular Revolution"হেডিঙ্গের নিচে ছুট্ট কৈরা লেখা Women are powering the country's rejection of radical Islam, but more must be done. বুঝা যায়, লেখক বিশেষ কামেল লোক। আমাদের কি করা উচিত আর কি করা উচিত না তা তিনি বৈলা দিছেন "more must be done" হুহু।লেখক আনিস আহমেদ University of Liberal Arts Bangladesh Foundation এর ভাইস প্রসিডেন্ট।
যেকোন বাংলাদেশি পাঠক পয়লা প্যারাগ্রাফেই হেচকি খাইবো।
"... Bangladesh seems an unlikely place for a secular revolution. It is a dry country with no bars, casinos or horse races. ...And secular principles are far from being consistently upheld: Madrassas receive state funding, while citizens are often hounded for perceived slights to Islam"
  এর মানে দাড়াইল "সেক্যুলার রাষ্ট্র" হৈতে গেলে আমাদের "ড্রাই" কান্ট্রিটারে ভিজাইতে হবে...বার, ক্যাসিনোতে নাচাপিচা করতে হবে আর ঘোড়া দাবড়াইতে হবে... জুয়া খেলতে হবে। আর মাদ্রাসার মত ফালতু জাগায় টাকা পৈসা না দিয়া মদ- জুয়াতে ইনভেস্ট করা লাগপে। লেখকের সেক্যুলার রাষ্ট্রের নব্য মডেল্টার দিকে আমি তাকায়া থাকি...অনেকক্ষন।

ব্যান  
লেখক আরো বলছে, আমাদের সেক্যুলার সরকার ক্ষমতাগ্রহনের পরেই হাওয়া পাল্টায়া দিয়া এই সেক্যুলার বিল্পব শুরু করছে। এবং এই শুরুটা হোইছে, হাইকোর্টের মওদুদী বই ব্যান করার মাধ্যমে। একটা ধর্মীয় বই ব্যান কোইরা আমরা ক্যাম্নে ধর্ম নিরপেক্ষ হৈলাম, তা আমার মাথায় আসে না। হুমায়ন আজাদ স্যারের বই হোক বা মওদুদী বই হোক...আমি ব্যানের বিপক্ষে। এই ব্যান করার কালচারটা বাড়তেই আছে। আমাদের নব্য সেক্যুলার সরকার এরি মইদ্দে ফেইসবুক, ইউটিউব, ইস্পিন, আর কয়েক হালি টিভি চ্যানেল, পত্রিকা ব্যান কর্ছে। এমনকি অনলাইনে লেখালেখির প্লাটফরমগুলাও তাগো পছন্দ না। মঙ্গলধ্বনি নামের একটি অনলাইন মিডিয়া যেখানে প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের পক্ষে লেখালেখি থাক্তো,সেইটাও ব্যান খাইছে সম্প্রতি। কারন ফুলবাড়ি কয়লাখনি নিয়ে লেখা তারা বরদাস্ত করে না, সিরাজ সিকদারের রক্তের দাগের সাথে সাথে তারে নিয়া লেখালেখিও তারা মুইছা দিতে চায়। আর ২৫মার্চ শেখ মুজিবের ভুমিকা নিয়া কোন আলোচনা (যেখানে তারে পর্যাপ্ত তেল দেয়া হয় না)তারা টলারেইট করে না। আমি যা শুনতে চাই, তুমি তা বলো নাই, তাই তুমারে আমার ভালো লাগে না...ব্যান খাও! 

পরের অংশে লেখক আনিস খান বাংলাদেশের এই "সেক্যুলার বিপ্লবের" মূল কারন অনুসন্ধান করছেন। উনার মতে নারী ক্ষমতায়নই মূল কারন।আর যুদ্ধাপরাধী থুক্কু মানবতাবিরোধীদের বিচারের মাধ্যমেও নাকি সেক্যুলারিস্ট বাংলা সমাজের গোড়া পোক্ত হৈতে যাইতেছে। পাঠকের উপ্রেই লেখকের দাবির সত্যতা খুজার ভার দিলাম।


সবচেয়ে বিরক্তিকর হৈল, ফরেন কমুনিটির আশির্বাদ কামনায় লেখকের উদাত্ত আহবান ।
The foreign community could reinforce these positive trends by supporting the war crimes tribunal. Important in its own right, the success of the trials is crucial to the secularization process as well. Trade and development partners also need to review their economic policies. The United States, for example, could reduce its punitive tariffs on Bangladeshi garments, providing an immediate boost to the economy.
যুদ্ধাপরাধী বিচার আর শুল্কমুক্ত সুবিধার সাথে সেক্যুলারিজমের কি কি যোগসূত্র আছে তা এই নাদানের মাথায় আসে না।
এই ধরনের লেখাকে হঠাত কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবা ঠিক হবে না। ইলেকশনের ঠিক আগে আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয় লিখছিলেন Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh
Harvard International Review তে।প্রকাশিতঃ , ১৯ নভেম্বর ২০০৮।ইলেকশনের আগেই তিনি কিছু দিক নির্দেশনা দিছিলেন ক্যাম্নে সেক্যুলার বাংলাদেশ গড়া যায়। সঙ্গে ছিলেন আমেরিকান কোঅথার Carl Ciovacco।তারা লেখছেন-

“Can the Awami League stop the growing tide of Islamism in a country that has seen the sale of burkas rise nearly 500 percent in the last five years?"
৫০০% এর হিসাবটা জানা যায় নাই...এই সার্ভেটা কে করলো তাও জানা যায় নাই।তবে বোরখার দিয়া যে জঙ্গিবাদের চর্চা হয় সেইরম একটা ধারনা এখন সারা দুইন্নাতে এখন পোক্ত হইছে । ফ্রান্সে বোরখা নিষিদ্ধ হোইছে। ফরাসী আইনমন্ত্রী মিশেল মাখি এরপরে বলছেন , "গণতন্ত্র ও ফরাসি মূল্যবোধের জয় হয়েছে। বোরকা নারীর বিচ্ছিন্নতার চিহ্ন অতএব তাদের মুক্ত করতে হবে"। বাহ। সামান্য  একটা পোষাক নিষিদ্ধের মাধ্যমে বিখ্যাত ফরাসী জাতির গনতন্ত্রের ভিত মজবুত হৈল। সাধু সাধু। বাংলাদেশেও এই কিসিমের একটা হাইকোর্ট আদেশ দেখলাম। তবে এখনও সেইটা স্কুল-কলেজের উপ্রে আছে, কুন্দিন এই সেক্যুলার বিপ্লবের সামিয়ানা স্কুল-কলেজ ছাড়ায়া সারাদেশ ঢাইকা দিয়া আমাদের নড়বড়ে গনতন্ত্রের ভীত শক্ত কোইরা দেয়- সেই অপেক্ষায় আছি।

পাঠক খেয়াল কৈরা থাকবে, হার্ভাড ইন্টারন্যাশ্নাল রিভিউ আর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দুইটাই আমেরিকার মেইনস্ট্রিম পাব্লিশার। টোটকা ফোটকা না। লেখকদের প্রফাইলো যথেষ্ট ভারি। তাদের লেখাগুলা গুরুত্বের দাবিদার । তবে সেক্যুলার রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর লেখকরা যাদের সাহায্যপুষ্ট, তাদের দিকে নজর দেই। তারা কেমন সেক্যুলার, সেইটা দেখি।

১। গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ: আমি এইটারে আমেরিকার বাবরি মসজিদ বলি। একটা মুস্লিম কমিনিটি সেন্টার নির্মানের কাহিনি নিয়া সারা আমেরিকায় হাউকাউ। বুঝতে হবে খুবি সেক্যুলার দেশ। নাম শুইনা মনে হইতে পারে এই মসজিদটা নাইন ইলিভেনের টুইন টাওয়ার হামলার পড়ে টাওয়ার দুইটার পাদদেশে বানানো একটা মসজিদ। কিন্তু না ...এইটা মোটেও গ্র্যান্ড জিরোতে না , আসে পাশেও না, ঝারা ২ ব্লক দুরে যেখান থেকে গ্রাউন্ড জিরো দেখাও যায় না ....তার চেয়েও বড় কথা এইটা কোনো মসজিদ না ...এইটা একটা ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টার যেখানে ফুড কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট থাকবে। সাথে নামাজের জন্য ২টা ফ্লোর।প্রতিবাদী আমেরিকার মূল কথা- ইসলাম একটি ঘৃণিত ধর্ম। ক্রিশ্চিয়ানিটি নিশ্চিহ্ন করতে মুসলমানরা উঠে পড়ে লেগেছে। আমেরিকার গ্রামাঞ্চলে ২০ টি গোপন জিহাদি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য সেগুলো এখনো সন্ত্রাসী তৈরি করছে। মুসলমানরা তাদের সন্তানদের হত্যা করছে।পাঠককে নিচের ভিডিওটা দেখার অনুরোধ রাখতেছি।

২। বার্ন কোরআনঃ "We believe that Islam is of the devil, that it's causing billions of people to go to hell, it is a deceptive religion, it is a violent religion and that is proven many, many times," Pastor Terry Jones, CNN. আমেরিকান এই ভদ্রলোক "Islam is of the Devil" নামের একটা জ্ঞানগর্ভ পুস্তকও লিখেছেন।
৩। বারাক ওবামাঃ এইলোক্টা হৈল আরেক ধর্মনিরপেক্ষতার পরাকাষ্ঠা। কাজে কর্মে আগেরটার (বুশ) মতই কিন্তু তিনি আবার হাদিস-কুরআন কিছু মুখস্ত করসেন ।এই হোইছে প্রব্লেম। এখন সেক্যুলার আমেরিকারে ঠান্ডা করতে হোয়াইট হাউস থিকা বিবৃতি দিতে হয় "আমাদের প্রেসিডেন্ট নিয়মিত চার্চে যান, তিনি নামাজ পড়েন না। আতংকিত হবার কিছুই নাই"।
আমাদের দেশের মন্ত্রিসভায় এত গুলান হিন্দুমন্ত্রি...আমাগোতো এত পেরেশানি লাগে না। হিন্দু এম্পিরে ভোট দিতেও আমাগো হাত পা এতো কাপে না। এরপরেও শুনতে হৈব, "আমাদের আরো সেক্যুলার হোইতে হৈব"।কি আজিব!

এদিকে আমাদের জাগ্রত বিবেক প্রথম আলোও ফিল্ডে নামছে...৫ সেপ্টম্বরের খবর
আদমশুমারির তথ্য মতে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ
লেখাটায় নানা দিকে ধানাই পানাই কৈরা...বার বার বলা হোইছে সামাজিক বৈষম্য, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, লুটপাট, সম্পদ ধ্বংস, দৈহিক নির্যাতন,ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা, ধর্ষণ ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণহানি, ভূমি গ্রাস এবং ২০০১ সালে নির্বাচনের পরে সংখ্যালঘুদের উপ্রে নির্যাতন---এই হ্রাসের কারন।

প্রতি ইলেকশনের পরেই মাইরপিট হয়...এইটা দাড়ায়া গেছে বাংলাদেশের কালচার (দূঃক্ষজনক হৈলেও এইটাই সত্য)। এখন বিএনপি- আওয়ামী লীগ মাইরপিটে যদি আওয়ামীলীগের মোট ১০০জন হতাহত হয় ...তার মদ্দে যদি ২০জন হিন্দু-আওয়ামী সাপোর্টার হয়...সেইটারে কি সংখ্যালঘুদের উপ্রে নির্যাতন নাকি রাজনৈতিক বিরোধ বলবো? কিন্তু যেই ৮০ জন মুস্লমান হিট খাইলো...তাদের জন্য এইটারে "সংখ্যাগুরুদের উপ্রে নির্যাতন" বলা যাবে না। কারন তাইলেতো আমাদের সেক্যুলার হওনের বিল্পব মাঠে মারা যাইব। 

ধর্মীয় ব্যখ্যা শুধরাইতে চাইয়া মামলা-মোকদ্দমাও হইতেছে বাংলাদেশের ...যে মামলা করসে তার মতলব কি সুষ্ঠু ব্যাখ্যা খোজা ছিল নাকি একটা ধর্র্মীয় দাঙ্গা-ফ্যাসাদ লাগানো ছিল? দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের মত কুরবানির ইতিহাসও মনে হয় চেঞ্জ করতেই হইব! কিন্তু কেউ কোনো পাল্টা আঘাত করে নাই ...কারণ আমরা সেক্যুলার না. 

সবাইকে সেক্যুলার বিপ্লবের লাল সালাম।


লিঙ্কসঃ আমেরিকায় ইসলামঃ টাইম ম্যাগাজিন
পোষাক ও পর্দা: ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্র: চিন্তা 
Chronology of a Bizarre Controversy: Hurt Feelings and the Ground Zero Mosque: CounterPunch

নিরঙ্কুশ রাষ্ট্র আর বন্ধ মঙ্গলধ্বনি :বাধন অধিকারী