১২ আগ, ২০১১

জার্নাল রিভিউয়ারদের মোকাবেলা করবেন কিভাবে?


আগের পর্বে পেপার লেখার কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে এসেছিলাম এবার পেপার সাবমিট করার পরের অংশ নিয়ে লিখব পেপার লিখার পরেই আপনার দ্বায়িত্ব শেষ হলোনা। পেপারটি এখন নানান ধাপে মূল্যায়ন হবে, মুল্যায়নের যেকোন ধাপে আপনার পেপারটি রিজেক্টেড হতে পারে। প্রথমেই যেসব কমেন্ট আশতে পারে তা আলোচলা করি।

প্রথম ধাপঃ জার্নাল এডিটর বা জার্নাল ম্যানেজার
এটাকে বলা হয় টেকনিকাল চেক। এদের হাতে নানান অত্যাধুনিক সফটওয়ার আছে। জার্নাল এডিটর বা ম্যানেজার আপনার পেপারটি প্রথমেই যেইসব কারনে রিজেক্ট/কমেন্ট দিতে পারেন-

১) আপনার পেপারটি আমাদের জার্নালের স্কোপে পড়ছে না। দুঃক্ষিত।
          অনেক পেপার এভাবে হিটেই বাদ পড়ে যায়। তাই সঠিক জার্নাল খুজে বের করা জরূরী, নইলে মূল্যবান সময় নষ্ট হতে পারে। সাবমিশনের আগে স্কোপ দেখে নেয়া উচিত। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চাইলে এডিটরের কাছে ইমেইল লিখে জানতে চাইতে পারেন

২) অত্যন্তদুঃক্ষের সাথে জানাচ্ছি যে, আপনার লেখার গুনগত মান আমাদের পেপারের উপযোগী না। বা, আপনার লেখার অরিজিনালিটি নাই।
          এরকম একটি কমেন্ট আপনার পেপার লেখার আগ্রহ-উৎসাহ শেষ করে দিতে পারে। কিন্তু হতাশ হবার কিছুই নাই। অনেক বিজ্ঞ প্রফেসরের পেপার এভাবে রিজেক্ট হতে দেখা যায়Bornmanm & Daniel (1993), Liesegang et al. (2007), Ray et al. (2000) এবং আরো অনেক গবেষক স্ট্যাটিসটিক্স ঘেটে দেখেছেন, ৫০% এর বেশি রিজেক্টেড পেপার পরবর্তীতে অন্যকোন কম ইম্প্যাক্টের জার্নালে ঠিকি পাব্লিশ হয়ে যাচ্ছে। সুত্রাং লেগে থাকতে হবে। একটি রিজেকশন আসলে, কমেন্টগুলো পড়ে পেপারটাকে আবার শুধরে নিয়া অন্য জার্নালে দিতে হবে। 
৩) আপনার পেপারের রেফারেন্সগুলার স্টাইল সঠিক নাই। লাইন নাম্বার দেন নাই। অমুক ফিগারের ক্যাপ্সন নাই। ফিগার আছে কিন্তু তার বর্ননা নাই। ফিগার বা চার্ট খুবি অস্পষ্ট। লেখা বেশি বড় হয়ে গেছে। ইত্যাদি।
                এই ভূলগুলান স্বাভাবিক। পেপার লেখা শেষ হলে, অনেকেই অতি উৎসাহে তাড়াহূড়া করে একটি জার্নালে সাবমিট করে ফেলেন। এই তাড়াহুড়ার কারনে জার্নালে "অথার গাইডলাইন" পড়ে পেপারটিকে ফরম্যাট করতে ভুলে যান। যারা প্রথমবার কোথাও সাবমিট করছেন, তাদের কমপক্ষে ২ দিন সময় দিয়ে ধীরে সুস্থে সাবমিট করা উচিত। তাহলে সহজেই এই ভূলগুল এড়ানো যায়।

৪) আপনার ইংরাজির অবস্থা ভালো না। উন্নত একাডেমিক ইংলিশ লেখেন।
                এইটা এশিয়ান অথার দেখলেই এডিটরদের কমন বরাদ্দের কমেন্ট। মোটেও ভয় পাবেন না। আপনার জিয়ারি ১৪০০ থাক্লেও এই কমেন্ট হজম করতে হবে, কারন আপনার নামের মধ্যে এশিয়ান গন্ধ আছে। যাহোক, এই সমস্যা মেটাতে আপনার বন্ধু/কলিগকে পেপারটি পড়তে দিন। পাঠকের চোখে অনেক ভুল ধরা পরে যা লেখকের চোখ এড়িয়ে যায়। এছাড়া অনেক ইংলিশ এডিটীং সাইট আছে। Elsevier নিজের একটি সার্ভিস খুলেছে Elsevier English Language Editing Service  প্রায় প্রতিটি পাব্লিশানেরে এমন সার্ভিস আছে। পেপার আপ্লোড করে দিয়ে ক্রেডিট কার্ডে ডলার ছাড়ুন- এডিট করে দিবে ২/৩ দিনে। তবে চার্জ অনেকআমার নিজের এমন একটি সার্ভিস আছে Publication.Easy, বছর দুয়েক হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপঃ রিভিয়ার

প্রথম ধাপে ছাড়া পেলে আপনার পেপারটি দ্বিতীয় ধাপে রিভিউতে যাবে।
পেপার লিখার পরের একট লম্বা সময় যাবে রিভিয়ারের কমেন্টের প্রতিক্ষায় সময়টা জার্নালভেদে বিভিন্ন  হতে পারে। আবার এমন হতে পারে, আপনার লেখা পেপারটি যেসব রিভিউয়ারের কাছে পাঠানো হয়েছে তারা সময় করে কমেন্ট দিতে পারছেন না...তাই আটকে আছে এরপরে দুই/তিন রাউন্ড  রিভিউ ও তার উত্তর চালাচালির পরে হয়ত আপনার পেপার এক্সেপ্ট হবে...বা রিজেক্ট তবে কিছুক্ষেত্রে সরাসরি এক্সেপ্টেড হতে পারে। 

পিয়ার-রিভিউড জার্নালে রিভিয়ার নির্বাচনে আপনার কোন হাত নাই। কিছু ক্ষেত্রে রিভিয়ারের নাম চাইতে পারে পাঠকের কাছে কিন্তু জার্নালের এডিটর সাহেব নিজের ইচ্ছা মত দুই/তিন জন রিভিয়ার সিলেক্ট করবেন। সমস্যা হচ্ছে, রিভিউয়াররা নানান কিসিমের হয়ে থাকেন। অনেকক্ষেত্রেই ব্যস্ত প্রফেসররা নিজে রিভিউ না করে প্রিয় পোস্টগ্রাজুয়েটের কাছে দিয়ে দেন, রিভিউ করে দেবার জন্য। আবার অনেকক্ষেত্রে এডিটর নিজেই আরেকজন মাস্টার্স বা পিএইচডি ছাত্রকে রিভিউ করার আমন্ত্রন জানান। অনেকক্ষেত্রে আপনার রিজিওনের একজনকে রিভিউয়ার নির্বাচন করতে পারে। 

কিছু রিভিউয়ার সামান্য ৩/৪ লাইন লিখে ক্ষান্ত দেন, এরা বেশ শান্তি প্রিয় রিভিউয়ার। তবে কমেন্ট যত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হোক, আপনাকে তার জবাব দিতে হবে খুবি মোলায়েম ভাষায়।
আবার অনেকে আছে বিশাল দুই তিন প্যারাগ্রাফ লিখে আপনার ধৈর্যবিচ্যুতি ঘটিয়ে একটি খুব সাধারন প্রশ্ন করেন। কয়েকপাতা রিভিউ কমেন্ট মোকাবেলা করতে হতে পারে। দমে যাবেন না। উত্তর দেবার বেলায় আপনি একিভাবে বিশাল গল্প ফেদে বসবেন না। উত্তর হবে সংক্ষিপ্ত, বর্ননামূলক ও সম্পূর্ন প্রাসঙ্গিক।

কমেন্ট দেবার পাশাপাশি রিভিউয়াররা একটি কাজ করে থাকেন। তা হলো পেপারটি কি পাব্লিশ করার উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারন করা। এক্ষেত্রে তাদের জবাব ৪ ধরণের হতে পারে।

ক। এক্সেপ্টড
খ। এক্সেপ্ট উইথ মাইনর কারেকশন (এরমানে সামান্য ঘষামাজার পরে পাব্লিশ করা যাবে)
গ। এক্সেপ্ট উইথ মেজর কারেকশন (এরমানে ব্যাপক প্রিমার্জন-পরিবর্তন- পরিবর্ধন করতে হবে, মন মতো না হলে বাতিল)
ঘ। রিজেক্টেড বা বাতিল।

তিন/দুইজন রিভিঊয়ারের ভোটের গড় করে মূল সিদ্ধান্তটি এডিটর নিয়ে থাকেন। যেমন তিন জনের ২ জন যদি মাইনর কারেকশন দেন, আর একজন এক্সেপ্টেড দেন -তাহলে সিদ্ধান্ত আসবে মাইনর কারেকশনআবার একজন মাইনর কারেকশন আর দুইজন মেজর কারেকশন দিলে আপনার মেজর কারেকশন পাবার সম্ভাভাবনা বেশি।
বাতিল হলে আপনার করার কিছুই নাই।  ২ সপ্তাহ পরে পেপারটি নিয়া আবার বসেন। কমেন্টগুলা পড়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে, আরেকটি জার্নালে পাঠিয়ে দিন। আর যদি এক্সেপ্টেড হয় তাহলে কিছুই করনীয় নাই, এডিটর সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইমেইল করুন। কো-অথারদের নিয়ে কাচ্চি খেতে যান।

যদি মাইনর কারেকশন পান, তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন। বিনা হাঙ্গামায়, কোন তর্কে না গিয়ে নামে নামে কমেন্টগুলোর জবাব দিয়ে দ্রুত পাঠিয়ে দিন।

আসল সমস্যা মেজর কারেকশনে। অনেকে কমেন্ট সহ্য করতে না পেরে পেপার উইথড্র করে অন্য জার্নালে দেন। এইটি একটি ভূল সিদ্ধান্ত। বুঝতে হবে, নুতুন সাবমিশন করলে আরো বেশি সময় যাবে। কারন সেক্ষেত্রে আবার প্রথম ধাপ থেকে রিভিউ শুরু হবে। তাই সময় নিয়ে (১- ২ মাস) হলেও কমেন্টগুলোর জবাব দেয়া উচিত।

* কমেন্টের জবাব একটি আলাদা ফাইলে জমা দিতে হয়। এটাকে বলে "রেস্পন্স লিস্ট"। 

* প্রতিটি কমেন্টের সাথে আলাদা রঙ দিয়ে পরস্কার করে একটি জবাব দিন। জবাবের সাপোর্টে সূত্র, রেফারেন্স দিতে পারেন। ছবিও দিতে পারেন।

* প্রতিটি উত্তর হতে হবে খুবি নম্র ভাষায়। ভূলেও রিভিয়ারকে আক্রমন করবেন না। রিভিয়ারের পয়েন্ট ভূল হতে পারে, তারাও মানুষতাড়াহুড়ায় তারা আপনার পেপার পুরোটা না পড়েই কমেন্ট করতে পারেন, যা কিনা আপনি পেপারে ব্যাখ্যা করেছেন। "We totally disagree", "For your information", "Please go through the book DDD, page no. 16"- এই রকম কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন। সবক্ষেত্রে রিভিয়ারের যুক্তি মেনে নিতে হবে এমন কথা নাই। তবে পালটা যুক্তি খুব জুতসই ভাষায় দিতে হবে।

* প্রত্যেক কমেন্টেই রিভিউয়ারের সবগুলো আঙ্গিক বুঝতে হবে এবং প্রতিটি আঙ্গিকেই উত্তর দিতে হবে। আংশিক উত্তর দেয়া পরিহার করতে হবে। 

* ক্ষেত্র বুঝে রিভিউয়ারকে সামান্য তেল দিন। এর বিকল্প নাই। 

* জ্ঞানী রিভিউয়ার সম্পূর্ণ নূতন বিষয় বা আঙ্গিকের অবতারনা করতে পারেন। এবং প্রশ্ন দিতে পারেন, কেন এই আলোকে পেপারে কিছু লেখা হয় নাই। হয়তো উঙ্ক বিহশ্যে রিভিউয়ারের জ্ঞান অগাধ। তাই সে আপনাকে গভীর জলে টেনে নিতে চাইবে। এমতাবস্থায়, সাইড দেয়াই সমীচীন। "The reviewer have pointed out a very unique research aspect. But unfortunately current research article is focused in KKK only. We hope to shade more light in future research endeavor."

* অনেক রিভিউয়ার একদম আনাড়ি কমেন্ট করতে পারেন। বা কনফ্লিক্টীং কমেন্ট দিতে পারেন। ধরেন, প্রথম কমেন্টে একটি জিনিস কেন যুক্ত করেন নি সেটি বললেন। আবার পঞ্চম কমেন্টে একি জিনিস কেন যুক্ত করেছি তা জানতে চাইলেন। অনেকক্ষেত্রে একি পেপার ২ মাস পরে দ্বিতীয়বার রিভিউ করার সময়, একি কমেন্ট দুবার করে ফেলতে পারেন। কারন প্রথম্বার কি কমেন্ট করেছিলেন উনি, সেটা ভূলে বসা স্বাভাবিক।  এসবক্ষেত্রে নম্রতা বজায় রেখে জবাব দিন। আর সরাসরি এডিটরের কানে ব্যাপারটি তুলুন।

রিভিউয়ায়দের যেসব বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়, সেগুলা নিচে দিলাম। আশা করি এথেকে পাঠক কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তা বুঝতে পারবেন

  1. Does the subject fall within the general scope of the journal?/ Is the topic of the manuscript appropriate for the Journal?
  2. Is this a new and original contribution?
  3. Is the information of significant interest to the readers?
    Is the title accurate and sufficiently descriptive of the content?
  4. Is the abstract sufficiently informative, especially when read in isolation?
  5. Are appropriate keywords given?
  6. Are the statistical methods used correct and adequate?
  7. Is the organisation of the article satisfactory?
  8. Does the content justify the length?
  9. Are the methods appropriate and scientifically sound?
  10. Are the conclusions supported by the data presented?
  11. Are the tables and figures well designed and add to understanding of the text?
  12. Is information in the tables and figures redundant?
  13. Are the references cited the most appropriate to support the manuscript?
  14. Should the manuscript be shortened?

এতকিছু শিখে-বুঝে এবং বছরব্যাপি গবেষনা করেও আপনি ভয়াবহ রিভিউ কমেন্ট পেতে পারেন। "আমি এমন খারাপ আর্টিকেল জীবনে রিভিউ করি নাই", " লেখকদের আবারো স্কুলে গিয়ে থার্মোদাইনামিক্স পড়া উচিত", "বিজ্ঞানের কোন শাখাতেই এইধরনের কোন পেপার পাব্লিশ করা সম্ভব না"। অভদ্র রিভিউয়ারের পাল্লায় পড়লে নিজেকে দূর্ভাগা ভাবুন। পেপার ইউথড্র করে এডিটরকে জানান আপনার অনুভূতির কথা। এবং অন্য একটি জার্নালে সাবমিট করুন। হ্যাপী পাব্লিশিং!

১ আগ, ২০১১

যেভাবে পাব্লিশ করবেন আপনার গবেষণা- থিসিস থেকে জার্নাল পেপার


শুরুতেই বলে নেই, এই লেখাটি যারা গবেষণা জগতে নতুন, প্রথমবারের মত আপনার আর্টিকেল কোন জার্নালে প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস আছে যা ভালো জার্নালে প্রকাশ করা সম্ভব। কিন্তু অনেক শিক্ষক এ ব্যাপারে উদাসীন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ততোধিক। শুধুমাত্র পাস করার জন্য লেখা হলেও, অনেক থিসিসের গুনগত মান আন্তর্জার্তিক জার্নালে প্রকাশ করার মত। এগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কলারশিপ পেতে ছাত্রদের যেমন সাহায্য করবে, তেমনি শিক্ষকদের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো/ পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে মনোনায়ন পেতেও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। বাইরের দুনিয়ায় ছাত্র-শিক্ষকদের উন্নতমানের পেপার লিখতে উৎসাহ দিতে আর্থিক পুরস্কার দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো গবেষনা প্রকাশণাকে তেমনভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। মনে রাখতে হবে, রিসার্চ পাব্লিকেশন আমাদের দেশের ও ভার্সিটির নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যায়। এটি রিসার্চ কোলাবোরেশন ও আন্তর্জার্তিক গবেষণা অনুদান আনতেও বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

কিভাবে আপনার থিসিসকে পেপারে রূপান্তর করবেন?
আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্ট-গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের থিসিস জমা দেবার পরে, সেটাকে পেপারে রূপ দেয়া খুবই সহজ একটি কাজ। পেপারের মূল গঠন থিসিসের চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে। ৬০০০শব্দে হয়ে যেতে পারে একটি পরিপূর্ন জার্নাল পেপার। থিসিস থেকে কাট ছাট করার এই প্রক্রিয়াটি করার জন্য দরকার হবে ২/৪ দিন সময়।
প্রথমে একটি আউটলাইন তৈয়ার করুন। যেমনঃ
১।টাইটেল ২।এবস্ট্রাক্ট ৩।কী-ওয়ার্ড ৪। ইন্ট্রোডাকশন ৪।বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ১ ৫। বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ২ ৬।রেজাল্ট ও ডিস্কাশন
৭।একনলেজমেন্ট ৮।কনক্লুশন ৯।রেফারেন্স

এরপর এই কাঠামোর ভেতরে লিখতে থাকেন।
১.ক। থিসিসের টাইটেল টিকে জার্নাল পেপারের টাইটেল হিসেবে চালিয়ে দিতে পারেন, অথবা কিছু স্পেসিফিক কি-ওয়ার্ড জুড়ে দিয়ে সুন্দর-সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিশ্লেষনাত্মক একটি প্রাসঙ্গিক শিরোনাম দিতে পারেন। অথারলিস্টে শিক্ষার্থীর নাম, সুপারভাইজারের নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন অব্দান যারা রেখেছেন তাদের নাম থাকা উচিত। এফিলিয়েশনে ভার্সিটির নামের সাথে ঠিকানায় একটি ভাল ইমেইল এড্রেস দিন। পূর্ণ নাম যুক্ত ইমেল এড্রেস দেয়াই প্রচলিতরীতি।
 ১.খ। এবস্ট্রাক্টটি সংক্ষিপ্ত হতে হবে। সাধারনত ৫০০ বা তার কম শব্দের মদ্ধ্যেই পুরো লেখার সারমর্ম এই অংশে প্রকাশ করতে হয় , জার্নালের গাইড লাইন অনুযায়ী। অবশ্যই আপনার পেপারের গুরুত্ব বুঝিয়ে কিছু ভুমিকা দিতে হবে। এরপরে খুব সংক্ষেপে পেপারে মূল কি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, কি কি মেথড ব্যবহার হয়েছে তার উল্লেখ থাকতে হবে। রেসাল্ট-ডিস্কাশন থেকে ধার করে কিছু রেজাল্টও এই অংশে যুক্ত করতে হবে।
১. গ। কী-ওয়ার্ডঃ ৫/৬ টি শব্দ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার লেখাটির মূল বিষয় ও সীমানা পরিস্কার করে ফেলতে হবে। কীওয়ার্ড হিসাবে বৈজ্ঞানিক টার্ম, প্যামিটারেরগুলোর নাম ব্যবহার করা যেতে পারে। টাইটেল থেকেও কিছু মূল শব্দ ধার করতে পারেন।
১.ঘ। থিসিসের ইন্ট্রোডাকশন থেকে নির্বাচিত অংশ নিয়ে জার্নাল পেপারের ইন্ট্রোডাকশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ইন্ট্রোডাকশন সাম্প্রতিক রেফারেন্সযুক্ত করা উচিত, বিশেষ করে যেই জার্নালে পাঠাবেন- সেই জার্নালে প্রকাশিত কিছু পেপার অবশ্যই যুক্ত করুন। এই অংশে লেখার স্কোপ, তাতপর্য, গুরুত্ব, উদ্দেশ্য, আপনার পেপারের মূল আলোচ্য সমস্যার বর্নণা থাকতে হবে।
১. ঙ। বিষয় ভিত্তিক আলোচনাঃ এই অংশটি লিটারেচার রিভিউ থেকে নিতে পারেন। পেপারের রেজাল্টগুলোর প্যারামিটারগুলো বর্ননা করতে পারেন। যেসব ইকুপমেন্ট-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তার পরিচিতি ও একুরেসী দিতে হবে। এই অংশে যে মেথডলজি এই পরীক্ষার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও থাকতে হবে।
১.চ। রেজাল্ট ও ডিস্কাশনে গ্রাফ ও টেবিল থাবে। প্রতিটি টেবিল ও গ্রাফের/চার্টের বর্ননা পাশাপাশি থাকতে হবে। ডিস্কাশনে প্রাসঙ্গিক কিছু পেপারের রেজাল্টের সাথে তুলনা থাকতে পারে।
১.ছ। একনলেজমেন্টঃ আপনার ল্যাব এসিস্টেন্ট, সহকারী, পরামর্শদাতা, আর্থিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এই অংশে উল্লেখ করুন।
১.জ। কনক্লুশনঃ রেজাল্টে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ন তথ্য এইখানে পয়েন্ট আকারে লিখুন। থিসিসে অনেক বড় করে লিখা থাকলে, সেখান থেকে কেটে ছেটে সংক্ষেপে দিন। অবশ্যি কিছু নিউমারিক রেজাল্ট থাকতে হবে, শুধু তুলনামূলক আলোচনা থাকলে চলবে না।
১.ঝ। রেফারেন্সঃ রেফারেন্স লিখার অনেক পদ্ধতি আছে। আপনি যে জার্নালে পাঠাবেন, সেখানে কোন পদ্ধতিতে লিখতে বলছে সে অনুযায়ী সাজান। যেমনঃ হার্ভার্ড, নাম্বারিং সিস্টেম। রেফারেন্স সাজানোর অনেক সফটওয়ার আছে, যেমনঃ END NOTE(http://www.endnote.com/ ), ProCite (http://www.procite.com/ ) ইত্যাদি। ইউটিউব থেকে এগুলোর ব্যবহারবিধি সহজে শিখতে পারবেন।


 কোথায় পাব্লিশ করবেন আপনার আর্টিকেল?
অনেক জার্নাল আছে, অনেক কনফারেন্স হচ্ছে প্রতি বছর আপনার বিষয়ে। কনফারেন্স পেপারের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই জার্নাল পেপারের মূল্য বেশি। সঠিক জার্নাল নির্বাচন আপনার পেপারকে দ্রুত পাব্লিশ করতে সহায়তা করে। শুরুতেই আপনার বিষয়ে কোন জার্নালগুলো ভালো, তা বুঝার জন্য আপনি যেসব পেপার সাইট করেছেন পেপারে, সেগুলো কোন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে নিন। ১০-১৫টি জার্নালের একটি তালিকা তৈরী করুন। এবার একটি করে জার্নাল সার্চ করে তার ওয়েবসাইটে গিয়ে ভালো করে নিচের তথ্যগুলো টুকে নিন।
ক. স্কোপ
খ. ইস্যু/ইয়ার
গ. ইম্প্যাক্ট ফেক্টর
ঘ. এডিটরের নাম ও ইমেইল ঠিকানা
এবার স্কোপ পড়ে নিশ্চিত হোন, কোন কোন জার্নাল আপনার বিষয়ের পেপার প্রকাশ করে। ইস্যু সুংখা প্রতি বছরে ৪ এর বেশি হলে বুঝবেন জার্নালটির প্রচুর পেপার দরকার হয়। এরমানে এদের সম্পাদনা ব্যবস্থা বেশ দ্রুত, আপনার লেখাটি প্রকাশ হবে কিনা তা দ্রুত জানাবে। কিছু জার্নাল ১ বছর পর এক্সেপ্ট করে, কিছু জার্নাল ৩মাস এর মধ্যেও এক্সেপ্ট করে। ১০দিনেও অনেক পেপার এক্সেপ্ট হয়েছে দেখা যায়। তাই পেপার সাবমিট করে ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। স্কোপ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকলে জার্নালের এডিটর বরাবর ইমেইল করে নিশ্চিত হতে পারেন (আপনার পেপারের টাইটেল ও এবস্ট্রাক্ট দিতে হবে)।
এরপরে আসে ইম্প্যাক্ট ফেক্টর। এটা আসলে বুঝায়, জার্নাল্টির পেপারগুলো কত বেশি অন্য পেপার দ্বারা সাইটেড হয়। উচ্চ ইম্প্যাক্টের জার্নালে পাব্লিশ করা কঠিন, কারন সেখানে লেখা পাব্লিশ করার জন্য অনেক পেপার এডিটরের কাছে আসে। কারন উচ্চ ইম্প্যাক্ট যুক্ত জার্নালে পাব্লিশ করা যেমন সম্মানের তেমনি এতে অনেক সাইটেশন পাবার সম্ভাবনা থাকে। ইম্প্যাক্ট ফেক্টর ৫ মানে, জার্নাল্টির প্রতিটি পেপার গড়ে ৫টি করে সাটেশন পায় প্রতি বছর। 
খেয়াল করে দেখবেন, অনেক জার্নালে পেপার পাব্লিশ করলে তারা লেখকের কাছ থেকে পাব্লিশ করার জন্য টাকা নিয়ে থাকে (৫০০-১০০০ডলার)। আবার অনেক জার্নালে ফ্রি পাব্লিশ করে। আপনার সংগতি বুঝে জার্নাল নির্ধারন করুন।
ISI ইন্ডেক্সড জার্নাল খুজতে পারেন http://science.thomsonreuters.com/cgi-bin/jrnlst/jloptions.cgi?PC=K
SCOPUS ইন্ডেক্সড জার্নাল খুজতে পারেন http://www.scopus.com/source/browse.url


কিভাবে পাঠাবেন আপনার পেপার?
অধিকাংশ জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক জার্নালে পেপার পাঠানোর অনলাইন সিস্টেম আছে, যেখানে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করে পেপারটির ফাইল আপ্লোড করতে হবে। আবার অনেক জার্নালে সোজাসুজি ইমেইল করলেই হয়। আপ্লোড করার আগে খেয়াল করে জার্নালের ‘অথার গাইডলাইন’ পড়ে পেপারটির ফরম্যাট করুন।
পাঠিয়ে দেবার আগে একটি কভার লেটার লিখুন, যেখানে ফরমালি এডিটর সাহেবকে আপনার পেপারটি পাব্লিশ করার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দিবেন। অবশ্যই আপনার পুরো নাম ও ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের ঠিকানা ব্যবহার করবেন চিঠির শেষে। লেখা শেষ হলে খুব সতর্ক হয়ে লেখার ফ্লো, বর্ননার খুত, গ্রামারের ভুল-চুকগুলো শুধরে নিন। এরপর সাবমিট করে অপেক্ষা করুন রিভিয়ারের কমেন্টের।

লেখাটি সায়েন্টিফিক বাংলদেশে প্রকাশিত http://www.scientificbangladesh.com//details/?pid=170&cat_id=5