২৫ মার্চ, ২০১২

ফেইসবুকের জোসেফ কনি ২০১২ ও মার্র্কিন যুদ্ধাপরাধবিরোধী ছবক

আপনার যদি ফেইসবুক বা টুইটার একাউন্ট থাকে, তাহলে হয়ত আপনি চেনেন জোসেফ কনিকে। ফেইসবুক, টুইটারে কয়েক মিলিয়নবার শেয়ার করা হয়েছে একটি ভিডিও যার উদ্দেশ্য জোসেফ কনিকে কুখ্যাত করা ও তার ভয়ংকর অপরাধ বিশ্বাবাসীকে জানানো। শুধু ইউটিউবেই এই ৩০ মিনিটের ডকুমেন্টারি প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহে দেখা হয়েছে ৮৪ মিলিয়ন বার, পেয়েছে ১.৩ মিলিয়ন লাইক। প্রভাবশালী সকল মার্র্কিন, ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলীয় পত্রিকায় এসেছে এই ভিডিওর খবর।


জোসেফ কনি উগান্ডার একটি দুর্ধর্ষ গেরিলা দলের নেতা। প্রায় ২৫ বছর ধরে তার দল লর্ডস রেসিসটেন্স আর্মি মূলত শ'খানেক যোদ্ধার একটি দল নিয়ে উগান্ডার হাজার হাজার শিশুকে অপহরণ করে, গ্রামবাসীদের ধর্ষণ, লুটপাট, অঙ্গহানি এসব তাদের উগান্ডায় কুখ্যাত করেছে। কয়েক বছর আগে সে পালিয়ে যায় কঙ্গোতে। সেখানেও তার অত্যাচার জারি আছে। এপর্যন্ত মোট হত্যা করেছে প্রায় ২৪০০ মানুষ


ভাইরাল এই ভিডিওতে ফেইসবুক টুইটারের সাধারণ ব্যবহারকারীদের দেখানো হয়েছে তাদের সামান্য সমর্ধনে এই ভয়ংকর অপরাধীকে পাকড়াও করা সম্ভব। ইউটিউব স্ট্যাটিক্সে দেখা যাচ্ছে কম বয়সী তরুন-তরুনীদের কাছেই এটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাদের আহবান করা হয়েছে এটি শেয়ার করে জোসেফ কনিকে দুনিয়াবাসীর কাছে পরিচিত করে মার্র্কিন সরকারের উপর চাপ দিয়ে তাদের বাধ্য করতে যেন তারা মার্র্কিন সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এই ভয়ংকর অপরাধীকে পাকড়াও করে পৃথিবীকে কলংক মুক্ত করে। তবে কুখ্যাতদের বিখ্যাত করে, পরে হত্যা করার এই আমেরিকান কৌশল নতুন নয়। তবে জোসেফ কনি যেকোন বিচারেই একজন ঘৃণিত অপরাধী, যার বিচার আবশ্যক। কিন্তু ে ই ভিডিওটি ছড়ানো হচ্ছে তার অন্তর্নিহিত বার্তা খুবি সুগভীর। ভিডিওটি অনেক যত্ন ও খরচ করে বানানো হলেও এর কিছু অংশে ধোয়াশা রয়েছে।


১. কনির বড় অস্ত্র ধর্র্ম: ভিডিওতে কনি সব অপরাধ  দেখানো হয়েছে, কিন্তু তার লর্ডস রেসিসটেন্স আর্মির আদর্শ জানানো হয় নি। মূলত উগ্র-খ্রিষ্টান মৌলবাদী এই দলটির আদর্শ টেন কমান্ডমেন্টের ভুল ব্যখ্যা দিয়ে কনি নিজে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়। এরা শিশুদের অপহরণ করিয়ে যুদ্ধ করায়, বিশ্বাস করানো হয় কনি একজন আধ্যাত্মিক নেতা যার সাথে প্রায়ই ঈশ্বরের কথাবার্র্তা হয়। এই গেরিলা দলটির অনেক ধর্র্মীয় উদ্ভট রীতিনীতি আছে যার সাথে প্রচলিত খ্রিষ্ট ধর্র্মের কোনো মিল নেই। যার প্রবক্তা কনি নিজেই।

২. জাতিসংঘ উপেক্ষিত:  ভিডিওতে ২০১২ সালে মার্র্কিন নির্বাচনে ডেমক্রেট ও রিপাবলিকানদের উপর চাপ প্রয়োগ করে মার্র্কিন বাহিনীকে এই জল্লাদকে ধরতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। খুবই উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু প্রশ্ন  থাকে, কেন উগান্ডার সমস্যার সমাধান মার্র্কিন সেনাবাহিনী করবে? কেন সারা বিশ্বের মানুষ মার্র্কিন সরকারের কাছে চাপ প্রয়োগ করবে? তাহলে কি দুনিয়ার সকল বড় বড় যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিপক্ষে অপরাধের বিচারের দ্বায়ীত্ব মার্র্কিন সরকারের? কেন জাতিসংঘের কাছে একই আবেদন রাখা হচ্ছে না? উগান্ডার সরকারের কাছ থেকে কি কোন সাহায্যের আবেদন এসেছে? 
মার্কিন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে সামিল হয়ে বাংলাদেশেও এখন মার্কিন সেনারা আসছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এই যুদ্ধ গত ১০ বছরে কতটুকু দমন হয়েছে? আমাদের পটকাবাজ জঙ্গীদের ধরতে, আমাদের দেশপ্রেমিক পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীই কি যথেষ্ট নয়?

৩. ইনভিসিবল চাইল্ড: আমেরিকান এনজিও ইনভিসিবল চিলড্রেন এই ভিডিও প্রচারণা তৈরী করেছে ও সারা বিশ্ব থেকে ফান্ড সংগহ করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এসেছে তহবিল ব্যবহারে অসচ্ছতার মত অভিযোগ। ওয়েবসাইটে দেখা যায় মাত্র দুটি ট্যাব যেখানে একশন কিট দেয়া হচ্ছে আর ডোনেশন কালেশন হচ্ছে। মোট সংগ্রহিত অর্থের মাত্র ৩২% তারা চ্যারিটিতে ব্যবহার করছে, বাকিটা চলচিত্র তৈরি আর বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় হয়েছে। তাই চ্যারিটি ফাউন্ডেশন হিসাবে তাদের দেয়া হয়েছে দুই তারকা রেটিং। তাদের ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টে ২০১১ সালেই মোট সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ডলারের উপর। 

৪.  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট: ভিডিওতে দেখানো হয়েছে  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের শীর্ষ অপরাধীদের তালিকা। তালিকার ১নম্বরে রয়েছে জোসেফ কনি। তালিকায় আরো চারজন কনি  এল.আর.এ সহযোদ্ধার নাম রয়েছে। আবার তাদের প্রচারিত পোস্টার ফ্রি ডাউনলোড করে দেখা যাচ্ছে সেখানে আমেরিকার দুই রাজনৈতিক দলের প্রতীক (হাতি ও গাধা) একসাথে করা হয়েছে। যেই মার্কিন কংগ্রেসের কাছে এই দাবি জানানো হয়েছে তারা নিজেরাই এই  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট মানেন না। আমেরিকা এখনো  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের সদস্যই নয়। বুশ, বিল ক্লিনটন থেকে আজকের হিলারি ক্লিনটন সবাই এর বিরোধিতা করেছেন। অবশ্য বুঝতে অসুবিধা হবার কথা না, গত কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার বিরোধী কাজগুলো মার্র্কিন সেনারাই করেছে, সেটা ইরাকের কল্পিত "ওয়েপন অফ মাস ডিসট্রাকশন" বা আফগানিস্তানে ওবামা বিরোধী অভিযান, বা সম্প্রতি পাকিস্তানের ড্রন বিমান হামলায় পাইকারীহারে বেসামরিক মানুষ হত্যা, প্যালেস্টাইনে ইসরেলি আগ্রাসনকে কয়েক দশক ধরে অস্ত্র, অর্র্থ ও কুটনৈতিক সহজোগিতা দিয়ে ইন্ধন জোগানো- যেটাই দেখেন.   

৫. মার্র্কিন নির্বাচনী বিপণনপন্থা : পাঠক জেনে থাকবেন ২০১২ সালে আসন্ন মার্র্কিন নির্বাচনের প্রাথী বাছাই চলছে। অনাবশ্যকভাবেই ইনভিসিবল চাইল্ডের এই ভিডিওতে ১২জন পলিসি মেকারের প্রথম সারিতেই আছে জর্র্জ ডব্লিউ বুশ ও ক্লিনটন সাবেক দুই মার্র্কিন প্রেসিডেন্ট যারা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে আমেরিকাকে যুক্ত করেন নি। ১২ জনের তালিকায় আরো আছেন জন কেরি, মিট রামলি, কন্ডোলিসা রাইস। প্রতি মার্র্কিন নির্বাচনেই দেখা যায় পেসিডেন্ট পদপ্রার্থিরা সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে গুরুত্ব নিয়ে প্রচার পায়। সেইসাথে তারা নির্বাচনের আগেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেন। শান্তির বাণী ছড়ান। বিগত নির্বাচনে ওবামা নির্বাচিত হবার পরেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পান 



৬. যুদ্ধাপরাধের বিচার: বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে মার্র্কিন সরকারের ব্যপক আগ্রহ দেখালেও নিজের দেশে কেউ যাতে   ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের আওতায় না পরে সেজন্য তারা এতে যোগ দেন নি। নিজের দেশের সেনাবাহিনীর অনেক অপরাধের মধ্যে আজ পর্যন্ত বিচার হয়েছে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মাই লাই গ্রামের গনহত্যার । তবে ২৬ জন অভিযুক্তের মধ্যে একজন সৈন্যকে মাত্র সাড়ে তিন বছর সাজা দেয়া হয় এই বর্বরোচিত হীন যুদ্ধাপরাধ স্বীকার করে নেয়ার পরও। প্রেসিডেন্ট নিক্সন  খালাস করে দেন ইউলিয়াম কেলিকে, কারণ মার্র্কিন জনতা তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ছিল। ভাগ্যের কি নির্র্মম পরিহাস এখন মার্র্কিন বোদ্ধারাই আবার আমাদের যুদ্ধাপরাধ বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলে ট্রাইবুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।   

৭ .চেতনার বাজারীকরণ :কনি ২০১২ ক্যাম্পেইন যেই মার্র্কিন এনজিও করছে, তার বিপুল অর্থ আসছে টি-সার্র্ট(২৫ ডলার), ব্রেসলেট (১০ ডলার),  পোষ্টারসহ একশন কিট (৩০ ডলার) বিক্রি করে। 

ওয়েবসাইটে সবকিছুই সোল্ড আউট দেখাচ্ছে। ঝাপিয়ে পরেছে অনেক সাধারণ স্কুল কলেজের ছাত্ররা। কনি শিশু অপহরণের বিচার দাবি করে। মহৎ উদ্দেশ্যকে পুজি করে ব্যবসা নতুন কিছু না, তবে সোশাল নেটওয়ার্র্কিং সাইটে সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে উদ্দেশ হাসিল করা একটি বিরাট সাফল্য। এই সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়েছে ওবামা প্রশাসন (News Link )

ফেইসবুকের ব্যবহার: ফেইসবুকে আমরা যা দেখে ভালো লাগছে, তাই শেয়ার করছি। ঘটনার গভীরে যাবার আগ্রহ ও সময় নেই কারো। শেয়ার করতে প্ররোচিত করছে ইউটুইবের ৫৮ মিলিয়ন ভিউ সংখ্যা, ফেইসবুকে লাইক সংখ্যা...  এখন সবাই কম বেশি লায়কোহলিক, সবাই এখন নিজ নিজ বন্ধু মহলে হতে চাইছেন স্টার. কিন্তু এই একই অস্ত্র ব্যবহার করে অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জিনিস আমরা শেয়ার করছি... সম্প্রতি হাটহাজারীর মন্দির ভাংচুর ঘটনায় তসনম বেগম নামে ফেইসবুক একাউন্ট খুলে একজন মসজিদ ভাঙ্গার একটি ছবি দিয়ে হাজার খানেক লাইক ও শেয়ার পেয়েছেন...অথচ অনেকেই খেয়াল করেছেন ছবিটি ফটসপড. এভাবে ফেইসবুকেই ধর্র্মীয় উস্কানি দিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর সুযোগ খুজতে পারে যেকেউ।

আপনার করণীয় কি?  
   
ইউটিউবে থাম্বস ডাউন বাটন আছে, কিন্তু ফেইসবুকে নেই। তাই সম্ভব হলে কমেন্ট করুন শালীন ভাষায়। শেয়ার করা ছবি ও ভিডিও আপত্তিকর, ধর্র্মীয় উস্কানিমূলক, অশালীন বা মিথ্যা প্রচারণা মনে হলে পেজটি রিলোড করে নিন। এরপরে দেখতে পাবেন "রিপর্র্ট দিস ফটো" বাটন। রিপর্র্ট করে দিন। মনে রাখবেন, ফেইসবুক টুইটারে আপনার অবস্থান অনেক ভালো কাজকে যেমন প্রমোট করতে পারে, ঠিক তেমনি অসতর্কতায় অনেক খারাপ উদ্দেশ্য আপনি সফল করে ফেলতে পারেন। তাই অন্ধ অনুকরন করার আগে মনে রাখবেন, জাস্টিন বিবার বা লেডি গাগার  চেয়ে আপনার সামাজিক দায়িত্ব ও মস্তিষ্কের উত্কর্ষ অনেক বেশি। 

রায় না বুঝেই সমুদ্রজয়ের হল্লা: দিপুমনির অজ্ঞতা, নাকি জনগনকে আরেকটি বাজিঙ্গা?


হঠাৎ সমুদ্র জয়ের যে হল্লা শোনা গেল, তার কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ITLOS) ওয়েবসাইটে ওয়েবসাইটেনজর রাখছিলাম। জার্মানির সেই ট্রাইবুনালের সাইটে প্রথমেই সেই রায়ের কপি দেয়া হলো...ডাউনলোড করে সেটা পড়তে শুরু করলে বাংলাদেশের কুটনৈতিক ব্যার্থতার এক কালপঞ্জি দেখতে পেলাম ...সে কথায় পরে আসছি।

কিন্তু রায় দিতে না দিতেই
রয়টার্সে , বিডিনিউজ২৪ ও প্রথম আলোতে রায়ের ফলে বিশাল বিজয় অর্জিত হয়েছে---পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য পেলাম। নিঃসন্দেহে এই বিষয়ে মীমাংসা একটি বিশাল খবর। কিন্তু পূর্ণ রায় পড়লে বোঝা যায় আমাদের কিছু অংশে জয় হলেও, গভীর সমুদ্রের কয়েকটি পূর্বঘোষিত ব্লক (কমপক্ষে ৬ টি) হাতছাড়া হয়ে গেছে।

গতকাল প্রথম আলোর একটি সংবাদে হালকা করে বলা হয়: "হিসাব মেলাতে দরকার চুলচেরা বিশ্লেষণ"
আজকের সংবাদে একদম পরিস্কার ভাবে এই কথাটাই এসেছে ---

ইটলসের রায় ঘোষণার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বাংলাদেশ যা চেয়েছিল, তার চেয়েও বেশি পেয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়টি বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে ঠিকই, কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন, সেটা বাস্তবের তুলনায় অনেকটা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলার মতো হচ্ছে।


রায়ের পূর্ণ কপি ও বাংলাদেশের সমুদ্র ব্লক্গলোর ছবি দেখলে ব্যাপারটা পরিস্কার বোঝা যাবে।


আমার মতামত হলো :
আর্ন্তজাতিক এই বিরোধের মিমাংসা একটা বড় অর্জন, যার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান চালাতে আমাদের আর বাধা থাকলো না মায়ানমারের সাথে। একই রকমভাবে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধ মেটাতে গেলে এই রায়ের ফল আমাদের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনার টেবিলে অনেক সুবিধা করে দিবে। তবে আসছে এপ্রিলে পেট্রোবাংলার বিডিং শুরুর আগে পিএসসি ২০০৮ এর সংশোধন না হলে এই বিজয়ের ফসল ঘরে আসবে না।

নুতুন মিমাংসিত সমুদ্রসীমানার সাথে পেট্রোবাংলার অফশোর বিডিং এর ম্যাপ মেলালে দেখা যায় আমাদের কয়েকটি গভীর সমুদ্রব্লক মায়ানমারের দখলে গেছে। তবে বিরোধের নিষ্পত্তি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কিছু পুরনো ভুলকে সামনে এনেছে।


১. ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত ৮ বার মায়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরেও কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নাই, সেই সাথে মিটিং মিনিটসে দুই পক্ষের সম্মতির স্বারক স্বাক্ষর থাকলেও, মায়ানমার ট্রাইবুনালকে জানায়, তারা "তথাকথিত" ১৯৭৪ এর সমঝোতাকে চুক্তি হিসাবে মানে না। জবাবে ট্রাইবুনাল জানায় মিটিং মিনিটসে মায়ানমারের পক্ষে স্বাক্ষরকারী কর্তা ব্যক্তির তার দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কোনো এখতিয়ার ছিল না। একারণে বাংলাদেশের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। এখানে মায়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোকনার সম্মতিকে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে পরিনত করার ব্যর্থতার ফলেই আলোচ্য বিরোধের সূত্রপাত ঘটে।

২. মায়ানমার গভীর সমুদ্রে তেলগ্যাস অনুসন্ধান করতে কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানিকে কাজ দেয় এবং ২০০৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজ প্রথম বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় মায়ানমার নেভির জাহাজ ও ৪টি ড্রিলিং শিপসহ দেখতে পায়। এর প্রায় ১ বছর আগে মায়ানমারের গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডারের খবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জানতে পারে নাই বা জানলেও দ্রুত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে সমাধান করতে যায় নাই। সেটা করা গেলে মায়ানমারের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক রেখেই সমস্যার সমাধান করা যেত। কারণ মায়ানমার দায়্যুকে বিবাদমান AD-৭ গ্যাস ব্লকটি অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দ দেয়ায় দেশটির বা দায়য়ুর বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

পত্রিকার প্রকাশিত খবরে বলা হয়ঃ

"সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ম তামিম বলেন, নতুন ব্লক করার জায়গা খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না, বরং বিদ্যমান ব্লকগুলোর পূর্ব প্রান্তের কয়েকটি ব্লক সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে মিয়ানমানের সীমানাভুক্ত হবে। এমনকি, গভীর সমুদ্রের ১১ নম্বর ব্লকের যে অংশের মালিকানা দাবি করেছিল মিয়ানমার, ইটলসের রায়ে তারও সবটা বাংলাদেশ পায়নি। ওই ব্লকের কিছু অংশ মিয়ানমানের অধিকারভুক্তই রয়ে যাচ্ছে। তবে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকার পাওয়ায় দু-একটি নতুন ব্লক সৃষ্টি ও বাংলাদেশের মাছ ধরার সুযোগ বাড়বে।"


 ছবিটি রায়ের আংশিক অংশের---যেখানে বাংলাদেশে সত্যিকারের বিজয় হয়েছে, যা অনেক দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এটি পয়েন্ট ৮ পর্যন্ত জ্যুম করা ছবি।
কিন্তু পয়েন্ট ৮ এর পরে একটা লম্বা লাইন টানা হয়েছে পয়েন্ট ৯,১০,১১ নিয়ে ....সেই ছবিটি রায়ের শেষের দিকে ১৪৬ পাতায় পাবেন। 





ছবি দুটো খেয়াল করে দেখলে বোঝা যাবে, আমাদের গভীর সমুদ্র ব্লক ১৮, ২২, ২৩, ২৬, ২৭, ২৮ নিশ্চিত ভাবেই মায়ানমারের দখলে পড়েছে

মোট হিসাবে আমাদের ২৮ টা ব্লকের মধ্যে ....৬টি পূর্ণ ব্লক আর ৪টি ব্লকের অর্র্ধেক গেছে আর আয়তনের হিসাব রায়ের ১৪২ পাতায় ৪৯৯ প্যারায় বলা আছে,----------- বাংলাদেশ ও মায়ানমারের রেশিও ওফ এলোকেটেড এরিয়া ১: ১.৫৪ ইন ফেবার অফ মায়ানমার 

--এখানে সমুদ্রজয় কে করলো তাহলে ?

সিঙ্গাপুরের ন্যানইয়াং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (NTU) সমুদ্র নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও অস্ত্রালিয়ার সাবেক নৌ-কমডোর স্যাম বেটম্যান বলেন " বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দিম্পু মনি এই রায়কে তার দেশের বিজয় হিসেবে দাবি করলেও, আসলে মায়ানমার এটিকে তাদের বিজয় হিসেবে দেখতে পারে। কারণ তারা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সীমানা পেয়েছে আর বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সীমানা নির্ধারণের দাবিতে পূর্ণ স্বদব্যবহার করতে, যে কারণে বাংলাদেশের দাবি বাতিল হয়ে যায়"। 


তাতে কি হয়েছে? সরকারের বিশাল রাজনৈতিক জয় হয়েছে!
চিয়ার্স 



-------------------------------------------------------------------
ছবি সৌজন্যে: বাপেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্র্ম্চারী এবং ব্লগার দিনমজুর