১৩ মার্চ, ২০১০

পনরই আগস্টের খুনের বিচারঃ জলপাই ট্যাঙ্কের পিঠে গণতন্ত্র


পনরই আগষ্ট নিয়ে এত বেশী লেখালেখি আর চাপাবাজি প্রতি বছর হয় যে, এই লাইনে কিছু লিখতে ইচ্ছা করে না।

কোন এক জ্ঞানী রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ননার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলেছিলেন-
"If you can control present, you can control the past. If you can control past, you can control future."

আমার কাছে ১৯ নভেম্বরের রায়ের চেয়ে এর মিডিয়া ইভেন্ট হিসাবে ধামাকাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। রায়ে অপ্রত্যাশিত কিছুই ছিল না(রক্ষে!)। খুনির ফাসির আদেশ বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু তাকে ঘিরে যে মিডিয়ার অতিআগ্রহ এবং তা মানুষের মানুষের মাঝে সংক্রমিত করার ব্যর্থ চেষ্টা দেখা গেল, তা হাস্যকর। মিডিয়াতে এই "মাহেন্দ্রক্ষনকে" স্মরনীয় জন্য কাউন্ড ডাউন সহকারে যে বিপুল বিশ্লেষনের ছড়াছড়ি দেখলাম সপ্তাহ জুড়ে, তাতে একটা সহজ প্রশ্ন চাপা পড়ে গেল, সেটা হল ভবিষ্যত ভাবনা। সবাই অতীত নিয়েই ভেবেছে...নানান রঙ্গের ব্যাখ্যা দিয়েছে, দিচ্ছে...কিন্তু ভবিষ্যত নিয়ে কেউ ভাবছে না। ভবিষ্যত ভাবনার আলাপে পরে আসছি। আগে কে কি বললো তা খেয়ালে রাখি।

১। পনরই আগস্টের ঘটনা একটি সামরিক অভ্যুত্থান ছিলো।- জনৈক বিএনপিপন্থী সাংবাদিক
--আমার কথা, সামরিক অভ্যুথানে মানুষ মারা জায়েজ আছে কি, জনাব?
২। এইটা ছিল আওয়ামী দুঃশাসন, খুন, লুটতরাজের ফল।
-- খুনের বদলা পরিবারসহ খুন? তাহইলেতো জনাব জিয়ার সপরিবারে খুনটা পেন্ডিং রইছে। নাকি? এরশাদের আবার অনেক পরিবার, উনারটাও পেন্ডিং?
৩। বাকশালীয় শাসন ও রক্ষীবাহিনীকে ইন্ডিমিনিটি দেয়ায় সামরিক বাহিনীর আক্রোশের ফসল-- হুম। এটার যুক্তিযুক্ততা আছে।

১৯৭৪ এর সংবিধান থেকে "জাতীয় রক্ষী বাহিনী এক্ট (সংশোধীত)" Article 3: No suit, prosecution, or other legal proceedings shall be against any member of the Bahini for anything which is in good faith done or intended to be done in pursuance of this order or rule made thereunder.
সহজ তরজমায়ঃ রক্ষীবাহিনীর কারো কোন বিচার হবে না যদি কিনা সেইটা "গুড ফেইথ"নিয়ে করা হয়। প্রশ্ন হলোঃ এই গুড ফেইথ জিনিসটা কিসে? মুজীববাদে?
এরকম ইন্ডিমিনিটি প্রাপ্ত একটি নতুন সশস্ত্র বাহিনীর বেশুমার প্রভাব-প্রতিপত্তি-প্রতাপ, নিঃসন্দেহে তৎকালীন সেনাবাহিনীকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছিল।

৪। রায়ের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: মওদুদ

৫। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জাতি কালিমাময় এক কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেল।

-- বিভিন্ন সরকারের আমলে এই মামলার গতি প্রকৃতি বুঝিয়ে দেয় এই দেশের বিচার বিভাগ কুকুরে টানা স্লেজের মত। এরা চাবুকের কথা শুনে। খালেদা এরশাদের আমলে মামলা কাজ পুরোপুরি বন্ধ, আর আওয়ামীলীগ আমলে শোডাউন সহকারে রায়।হাহ!স্বাধীন বিচার বিভাগ বটে!

৬। রায়টি হোক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিক নির্দেশনা--গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ
-- হায় হায় স্যার। ৩৪ বছর পরে রায় দেয়াটাকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিক নির্দেশনা ধরলে, কোন মামলাই ৩০-৪০ বছরের আগে শেষ হবে না।
৭। খুনিচক্রকে রক্ষা করেছে জিয়া এরশাদ খালেদা সরকার-- মতিউর রহমান
-- জ্বী। করেছে। যেমন আপনারা রক্ষা করেছিলেন জেনারেল মঈনকে।
৮। বাঙালি জাতির কাছে আজকের দিনটি ঐতিহাসিক দিন।তাই ওই রায় সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। আমরা ওই ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানাই।--এরশাদ
-- তাহলে খুনিদের দেশে ফিরিয়ে ফ্রিডম পার্টি বানাতে দিয়েছিলেন ক্যানো আপনি?ক্ষমতার মাখন পেয়ে ভোল পালটে ফেললেন?আর কত?

"ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না বলেই, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে"
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে শেখ মুজিবের বংশধরদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা আইন হল। হাস্যকর। যতগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের খুন হয়েছেন...ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, বেনজির, ইসরায়েলের Yitzhak Rabin, আমেরিকার জন এফ কেনেডি... এদের কারো কি নিরাপত্তা ঘাটতি ছিল? না। বরং রাষ্ট্রের সর্বচ্চো নিরাপত্তার মহড়াতেই এদের জীবণ দিতে হয়েছে।

মূল জায়গায় আমাদের কি কোন অগ্রগতি হলো? ১৫ আগষ্টের মত এক রাতে গনতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতা দখলের মানসিকতা আমরা ১/১১ এর পরে আবারো দেখলাম। এবারে একটু ভিন্ন মোড়কে। প্রথমে বলা হল, সামরিকবাহিনী সমর্থিত সরকার (যদিও চাকুরীর নিয়ম বলে সকল সরকারকে সমর্থন দিতে সামরিকবাহিনী বাধ্য... তাহলে এরম হাস্যকর নামকরনের মানে কি দাড়াইল?),এরপর বছর গড়াতেই নাম পালটে সবাই এটাকে জেনারেল মঈনের সরকার বলা শুরু করল। আবার জিয়া-এরশাদের মত গনতন্ত্রের হত্যাকারী খুনি সেনা কর্মকর্তাদের তোয়াজ করতে দেখলাম মুজিবকন্যাকেও। খেয়াল রাখতে হবে, এদের চরিত্র ভিন্ন, কিন্তু উদ্দেশ্য এক। ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-রেহানা-জয়ের একই সাথে পাওয়ার এক্সিসে আসা ও সেইটার হরদম অপব্যবহার করা এইটাই প্রমান করে,ইতিহাস থেকে এরা কিছুই শেখে নি। দূর থেকে কলকাঠি নাড়ার চেয়ে আসন গেড়ে বসাতেই উনাদের আগ্রহ বেশী। বিএনপির কাউন্সিলে তারেক জিয়ার প্রমোশনও এইটাই প্রমান করে, কোথাও কোন অগ্রগতি হয় নাই। ব্যক্তিকেন্দ্রিক (মতাদর্শ বা ইস্যুভিত্তিক নয়) রাজনীতি বা ক্ষমতার তীব্র কেন্দ্রমুখীতা যদ্দিন থাকবে... তদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট থেকে জলপাই ট্যাংক বের হবার ভয় থাকবেই।

তাই আমার অনুরোধঃ ১। সেনাবাহিনীকে নিজের মত চলতে দিন। সামরিকবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রমোশন দিয়ে দলবাজির সুফল আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। কাউকে বিশেষ সুবিধা দেয়া মানে...কাউকে বঞ্চিত করা। বঞ্চিতরা বিপথগামী হতে সময় লাগে না।

২। আসামের স্বাধীনতাকামী উলফা চেয়ারম্যানকে পাকড়াও করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার আগে জানা উচিত... এরা ৩০ বছরের বেশী সময় ধরে যুদ্ধে করছে। হাজারো উলফা সদ্যস্য ও তাদের পরিবার খুন হয়েছে এপর্যন্ত। ৪/৫ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার দলটির নতুন শত্রুর খাতায় নাম তোলার কোন দরকার ছিল না। এদের দেশে ধুকতে না দিয়ে হাত পরিস্কার রাখলেই ভাল হত।

আর কোন ১৫ই আগস্ট নয়, এখন আমাদের দরকার অনেকগুলো ১৬ই ডিসেম্বর। ছবিঃ নাবিল
------------------------------------------------------------
অন্যান্য লেখাঃ
তেল-গ্যাস বুঝো না, স্বাধীনতা বুঝো?
জনাব, আপনার মানসিক ভারসাম্য কোন দিকে হালিয়া আছে?
ব্যানানা বাংলাদেশ-৪ (কি চমেতকার দেখা গেল!)
কন্সপিরেসি থিওরী-পারট ৩ (সিউডো-জঙ্গি রাষ্ট্রের ছায়া)

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): পনরই আগস্টরাজনীতিবাংলাদেশ ;
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৬

কোন মন্তব্য নেই: