২৭ মার্চ, ২০১০

আধুনিক ইতিহাসের পাঠশালায় বাঙ্গাল, 'আ' তে আওয়ামী, 'ব' তে বাকশাল (দ্বিতীয় খন্ড)

পূর্বপাঠের পুনরালোচনাঃ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের নির্দেশে ইতিহাসে কাচা বাঙ্গাল বোলগে গিয়াছিল "আধুনিক ইতিহাস" শিখিতে। 'আধুনিক ইতিহাস' শিক্ষার পাঠশালায় গিয়া বিবাদে জড়াইয়া বাঙ্গালের নাম কাটা গেল। ফিরিবার কালে তার চটি জোড়াও খোয়া গেল।
------------------------------------------------------------------------------
কিন্তু অর্জনটাও কম নহে। গ্রামে ফিরিয়া নব্য ইতিহাস জ্ঞান ছড়াইয়া সে বেশ খ্যাতি পাইয়াছে। এ বাড়ির মিষ্টি কুমড়ো, ও বাড়ির পাকা কলা ইনাম আসিল।১০ গ্রামে এরম কথা কেউ বলিতে পারিয়াছে? দিকে দিকে তার বাণী ছড়াইয়া গেল। "বাকশাল ছিল দ্বিতীয় বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিকমন্ত্রের বিপ্লব। যাহারা উহাকে স্বৈরশাসনের রুপকল্প বলে তাহারা আসলে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি"। তবে লোকে আরো জানিতে চায়। তাহারা আরো শুনিতে চায় বাঙ্গালের কাছে। বাঙ্গাল ভাবিয়া পায় না, সে নুতন কি বলিবে। কোথা হৈতে বলিবে, সবি তো ইতিহাস। সকলে দেখিয়াছে। বানাইয়া বলিলেতো ডাহা মিথ্যা হৈবে। এদিকে আমাগোবোলগের আধুনিক ইতিহাস শিক্ষার দুয়ারো বন্ধ।নাম কাটা। আর কে যায় ওপথে আবার চটি জোড়া হারাইতে!

অনেক ভাবিয়া একদিন প্রভাতে বাঙ্গাল ঢাকার পথে রওনা হৈল। ঝোলায় আধুনিক ইতিহাস শিক্ষার নানান ফরমান। ঢাকায় আসিয়া সে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের রাস্তায় ঘুরিতে লাগিল। জনে জনে জিজ্ঞাসিল "আধুনিক ইতিহাস শিক্ষা কোথা পাই?"। এরুপ কোন ডিপার্ট্মেন্টের কথা কেহ বলিতে পারিল না। শেষে এক রিক্সাচালক ভ্রাতা বলিল "পাব্লিক লাইব্রেরী যান মামা, উহা জ্ঞান ভান্ডার"। পাব্লিক লাইব্রেরীতে গিয়া বাঙ্গাল নানা পুস্তক ঘাটিল। কিন্তু নুতন কিছুই পাইলো না। কোথায় আধুনিক ইতিহাস? সবি তো গ্রাম্য বিদ্যালয়ে পড়ানো সেই পুরাতন ইতিহাস লাগিচ্ছে। মোটা মোটা বই টানিয়া বাঙ্গাল হাপাইয়া উঠিল। শেষে পুস্তক ছাড়িয়া পত্রিকা ধরিল। সহসা তাহার জ্ঞান নেত্র উন্মোচিত হৈল। আহা! ইহাই তো খুজিতে ছিলাম। খাতা খুলিয়া বাঙ্গাল খসখস করিয়া নোট লৈতে থাকিল।

"দুনিয়া কাপানো ত্রিশ মিনিট"- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বিষয়ে ২০১০ সালের পূর্বে কেহ এই বিষয়ে আলোকপাত করে নাই। শেষমেষ গ্রাম্যমুঠাফোন আর শহুরে প্রথম আলোই ইহা ইতিহাসের খনি হৈতে টানিয়া তুলিয়া লোকের সুনাম কাড়ীল। ইহা আধুনিক ইতিহাস না হৈয়া যায় না।

“ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের অবদান”...হুহু...ইহাও নুতন,২০১০ সালের আগে কেহ এরুপ দাবি করে নাই। ১৯৫২ সালে তরুন যুবা শেখ মুজিব সুদূর কলিকাতায় বসিয়া সুতা টালিয়া বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন।গুনীলোকের কর্মপ্রক্রিয়াই অন্যরকম। ইহারা স্থান-কাল-পাত্রকে জয় করিয়া কোথা হৈতে কবে উদয়, কাহাকে কুপোকাত করে বুঝা যায় না।
যথেষ্ট। বাঙ্গাল গুলিস্তান আসিয়া বাসে উঠিল।বাস যাত্রায় সে শুধুই ভাবিল। তাহার তন্ময় ভাবনা সুদূর প্রসারী।

পরদিন গ্রামের মুরুব্বি জমায়েতে বাঙ্গাল তার খাতা খুলিয়া জ্ঞান বিতরন সারিল। একি শুনাইলো বাঙ্গাল। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা-সকলের মুখ সদ্য প্রস্ফুটিত শাপলার ন্যায় প্রসারিত হৈল। খাতা নামাইয়া রাখিয়া বাঙ্গাল বলিয়া চলিল “ভাষা আন্দোলনের সেই ত্রিশ মিনিটের আন্দোলনে যোগদিতে আমার বাবাও ঢাকা গিয়াছিল। মিছিল করিয়াছিল। শেষে পুলিশের ধাওয়া খাইয়া গ্রামে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। কিন্তু টিয়ারগ্যাসের প্রভাবে তাহার চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এই সুযোগে তমিজ চাচা জমির দলিলে বাবার সাক্ষর করাইয়া জমির দখল লৈয়াছে।”
তমিজ মিয়া দাড়াইয়া ছাতি উচাইয়া কহিল “তবেরে! ছ্যাপ দিয়া গুনিয়া তোর বাবারে জমির দাম দিয়াছি। ভুলিয়া গিয়াছিস!”
বাঙ্গাল নির্লিপ্ত “ভাষার জন্য লড়াই করিতে গিয়া আমার বাবা জমিন হারাইয়াছেন। তোমরা আমার জমিন ফিয়াইয়া দাও। তমিজ চাচা...স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি...ছলেবলে সে জমিন দখল নিয়াছে”। সকলে গুঞ্জন তুলিল। একিরম কথা, চাচা হৈয়া ভাতিজার হক মারিয়া দিল তমিজ! বেশ গোল বাধিল।

গ্রামের মসজিদের ইমাম কলহ থামাইতে বলিল "শোনো বাবা, বাঙ্গাল। তোমার বাবা আমার বাল্য বন্ধু ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা একত্রে পলাইয়া সিনেমা দেখিতে শহরে গিয়াছিলাম। আল্লাহ মাফ উনার আত্মার শান্তি দিন"
----------------------------------------
অন্যান্য রম্য লেখা
আধুনিক ইতিহাসের পাঠশালায় বাঙ্গাল, 'আ' তে আওয়ামী, 'ব' তে বাকশাল-প্রথম খন্ড
ক্যান্টিনে শোরগোল!- বাই বুয়েটিয়ান ফর বুয়েটিয়ান অফ বুয়েটিয়ান
বুয়েটের ঝড় ডুয়েটেও আসিতেছে! হুশিয়ার!
নয় রশি পীরের(RP9) তাবীজ!

কোন মন্তব্য নেই: