১৩ মার্চ, ২০১০

জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দিয়াছেন?ডেনড্রাইটের কঙ্কালে সবুজ শ্যাওলা

হা ভায়া... জাফর স্যারের কথাই বলিতেছি।আমাদের একমাত্র সেলিব্রিটি শিক্ষক, বেলের গবেষক(যদিও গবেষনা উনি ছাড়িয়াছেন আজ ৮ বৎছর হইল), প্রথম 'কালো'র কলাম লেখক... সাধাসিধা মানুষ... যিনি কিনা টিভি দেখেন না বলিয়া কিশোর কিশোরীর চর্মচোঊক্ষে মহান হইয়াছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঝান্ডা উচা করিয়াছেন রোজ মাসে একবার। উনাকে লিয়া লেখা ব্লগ, সর্বচ্চো সংখ্যক প্লাস ও মাইনাস উৎপাদন করিয়াছে। ব্লগীয় গোলাগুলিতে অনেকেই হয়েছেন লব্য ড়াজাকার। ভূমিকা না পড়িয়াই মাইনাস বাটন খানা খুজিতেছেন নাকি?খান্ত হোন।

আসেন শুরু করিঃ জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দিয়াছেন?
ক্যান ভায়া... এত লোক থাকতে জাফর স্যার ক্যানো? সহজ। একমাত্র সেলিব্রিটি শিক্ষককে একটু ভাল করিয়া জানার চেষ্টা আরকি...এছাড়া কিছুই না। তবে আমি কিন্তু ঈমান, দেশপ্রেম মাপার নিক্তি নিয়া বসি নাই।জামাতি ভাইদের নিক্তি আছে...ঈমানের বাটখারাও আছে হয়ত... উনাদের কাছে যান জাফর স্যারের দেশপ্রেম ও আস্তিকতা মাপিতে। উনার কোন লেখায় ইসলামকে চিমটি দিয়াছেন... তা খুজার সময়ও আমার নাই।রোজ হাশরেই সকলের ফলাফল প্রকাশিত হইবে... সুত্রাং এবিষয়ে এন্তার গবেষনার প্রয়োজন নাই।

তাহা হইলে বাছা খেপিলে ক্যানো?
জাফর ভক্তকুল ও তার এন্টিকুল। ফেসবুকে দুইখানা গ্রুপ খুলিয়াছে এরা। একটি ভক্তকুল অপরটি এন্টিকুল। এন্টিকূলের গ্রুপের নাম দিয়াছে United Thousands Member to Save Our Future Generation আহা, ভবিষ্যত প্রজন্মকে কি যাতনা হইতে যে বাচাইতেছেন উনারা, তাহা ভবিষ্যত প্রজন্মই বলিতে পারিবে।

আর আছে ভক্তকূল...উনাদের দাবি সবাইকে ঝাপাইয়া পড়িয়া এন্টিকূলের গ্রুপের নামে ফেসবুকের আদালতে জিডি করিয়া আসিতে হইবেক। মানে 'রিপোর্ট দিস গ্রুপ' বাটনে চিপিয়া দিতে হইবেক। বাহ বাহ। প্রশ্ন হইলো "জাফর সাহেবের নামে কেহ কুৎসা রটাইলে আমাকে ক্যানো রিপোর্ট করিতে হইবে? জাফর স্যারকে আসিয়া রিপোর্ট বাটনে চাপ দিয়া জাইতে বলো। ল্যাঠা চুকিয়া যায়"

আমি দুইদলের কাছ হইতেই নেমন্তন পাইয়াছি। বল মাঝ মাঠে, প্রশ্ন হইল নামিব কুন দিক দিয়া!
ভোটভুটির গেল হপ্তার রেজাল্ট দিয়া রাখিঃ
জাফর স্যারের ভক্তকুল গ্রুপে মেম্বার ১৩৯৪ জন
জাফর স্যারের এন্টিকুল গ্রুপে মেম্বার ১১৫৯ জন
বাহ বাহ... জাতির মোট ২৫৫৩ জন পাওয়া গিয়াছে... যারা দেশ ও জাতি উদ্ধার করিয়া ফেলাইতে লেংটি পড়িয়া ইন্টারনেটিয় মল্ল যুদ্ধে লামিয়াছে... আহা... দেশ তরতরাইয়া আগাইয়া চলিতেছে।

আমি এইরুপ আরেকটি মল্লযুদ্ধ দেখিলাম হাইকোর্টে... "স্বাধীনতার ঘোষনা কে দিয়াছেন?" শুনিয়াছি হাইকোর্টে নাকি হাজার হাজার মামলা আটকাইয়া রহিয়াছে... তো উহাদের টপকাইয়া পেঙ্গুইন পেশাজীবিরা ক্যানো ৩০বছর পূর্বে নিষ্পতি হইয়া যাওয়া একখানা কেস লইয়া পড়িয়া আছেন বুঝিলাম না। মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাকার বিষয়াদির কচলাকচলি আমার কাছে এখন ভাড়ামি লাগে। পারলে দেশের জন্য কিছু করেন... চুল্কাইলে আদালতে যান...২/৪ খানা রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়া জিতিয়া আসেন...ব্রাভো দিব। কিন্তু চেতনার চামড়াটা আর চুষিতে বলিয়েন না। উহা ৩৮ বছর চুষিয়া দেশের এই হাল করিয়াছি।

ফিরিয়া আসি প্রশ্নেঃ জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দিয়াছেন?
গাল গল্প উপন্যাস শিশু সাহিত্য কলাম--- আর কিছু লেংটি পড়া ভক্তকূল দিয়াছেন জাতিকে, যাহারা জাফর স্যারকে কিছু বলিলে 'ড়াজাকার' গালি পাড়িতে পাড়িতে ছুটিয়া আসিবেক... মাইনাসের বন্যায় ভাসাইয়া দিবেক... তাহা না হইলে দেশপ্রেম থাকিল কোথায়?হুম। জাফর স্যার তাহা হইলে মুক্তিযুদ্ধ না করিয়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা...দেশপ্রেমের ধারক ও বাহক?! বাহ! বহুত খুব! কোন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসার অভাবে মরিলে এমন গেল গেল রব উঠিতে দেখিয়াছেন কি? আর কুৎসা, বঞ্চনা..সেতো আকছার।

আলেকজান্ডার ভুল প্রশ্ন করিয়া পটল তুলিয়াছেন। প্রশ্নটা করা জাইত জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দেন নাই?
যাহা দেন নাই তাহা হইল... তিনি যে কাজটা সবচেয়ে ভাল পারিতেন...সেইটা করেন নাই।তিন তিন খানা ইউএস-পেটেন্ট তৈয়ার করিয়া আসিয়া... তিনি দেশে কি গবেষনা করিলেন... দেখিয়া আসি।


৩৫ খানা পাব্লিকেশ্নের মধ্যে ...২৮ খানা জার্নাল পেপার, ৭ খানা কনফারেন্স...স্কোপাসে এমন টাই দেখাইতেছে। খুটাইয়া দেখি। পেপারগুলান মোট সাইটেশন পাইয়াছে ৩১৪ খানা...আজ পর্যন্ত। বাহ! কিন্তু এর মধ্যে সেগুলানে জাফর স্যার প্রথম লেখক সেগুলান(মাত্র ৪ খানায় ফাস্ট অথার উনি নিজে) সাইটেশন পাইয়াছে মোটে ৩ খানা। মন্দ ভাগ্য আর কাহাকে বলে! স্কোপাসের লিঙ্কঃ অথার ডিটেইলস

ঘবেষনা দুনিয়ায় আমাদের একমাত্র পতাকাখানা উড়াইতেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল্যের একটি জার্নাল।BANGLADESH JOURNAL OF BOTANY (ISSN: 0253-5416)। বাংলাদেশের একমাত্র ISI Indexed জার্নাল। আর বিদেশ ফেরত বেশুমার শিক্ষককে পাইবেন ঢাবি, বুয়েট, জাবি ও অন্যান্য সব ইউনিতেই। প্রত্যেকেই বিদেশের উচ্চতর স্যালারীর মোহ ছাড়িয়া দেশে আসিয়া...লোডশেডিঙ্গে মশা মারিতেছেন... কই উনাদের ত্যাগটা কেউ খুজিইয়া পাইতেছে কি? উনাদের দেশপ্রেমটাও দেখিতে পাইতেছেকি? কই... উনাদের নিয়াতো হল্লা হইতে দেখি না। ভোটের বাজারে জাতির চেতনা লইয়া দু কলম লিখিইয়া কিশোর-কিশোরীর চোখের জল-নাকের জল এক করাইতে পারেন না, এইটাই কি তাহাদের দোষ?

অহ হো...আরেক্টা বিষয়... পাব্লিকেশন গুলানের টাইটেল পড়িয়া কোনটাই কম্পুবিজ্ঞানের বিষয় বলিয়া বোধ হইতেছে না... পদার্থ(অপ্টিক্স), ইইই, নিউক্লিয়ার সায়েন্স ইত্যাকার বিষয়াদি বেশি দেখিতে পাইলাম...যাহা হঊক আমি নিজে কম্পুবিজ্ঞানের ছাত্র নই...তাই ঘাটিয়া তেমন কিছু বুঝিয়া উঠিতে পারিলাম না।তবে কেহ যদি একটু তকলিফ করিয়া এই অধমকে বুঝাইতেন...কি করিয়া কম্পুবিজ্ঞানে কোন পাব্লিকেশন না করিয়া উনি একচান্সে কম্পুবিজ্ঞানের প্রফেসর হইয়াছেন... তাহা হইলে আরাম হইত।

ঝাতি তবে কি পাইল? ক্যান এক জন প্রবল আবেগী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত কলামিস্ট। হুম... এইতো লাইনে আসিয়াছেন। চলুন তবে...কিছু কলাম পড়িয়া আসি।

মুক্তিযুদ্ধ প্রযন্মের শেষ সুযোগ (!) ১৪মে প্রেথম আলু

লেখার শুরুতেই তিনি পাখিদের চাল খাওয়ান...চালের মূল্যবৃদ্ধিতে উনি পাখিদের চাল দিতে না পারিয়া যারপর নাই মনকষ্ট পাইয়াছেন...শেষাংশে...সাংসদ তৌহিদ জংএর সংবর্ধনায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের রোদে দাড় করাইয়া রাখার বিষয়টি...নিয়া আসিয়াছেন... উনার অন্যান্য লেখাতেও শিশু সাজিবার একটা ব্যর্থ চেষ্টা প্রকট। ব্যর্থ বলিলাম কারন লেখার পেটে রাজনৈতিক গ্যাসের ভুটুস-ভাটাস প্রবল। শিশুরা রাজনীতী করে না। উদাহরন দিয়া লই কিছু লাইন-

"সরকার ইচ্ছে করলে অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারে" (আওয়ামী সরকার)
"বিডিয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, যখন তদন্ত রিপোর্ট বের হবে তখন হয়তো অনেক কিছু নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে (বটেক!)।তবে যে বিউষয়টি নিয়ে কারো কোন বিভ্রান্তি নাই নেই সেটি হচ্ছে সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সময়টুকুতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অসাধারন রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভুমিকা।সেনাকুঞ্জে সামরিক অফিসারদের সঙ্গে তাঁর বাগবিতন্ডার সেই সিডিটি কারা কীভাবে বের করেছে সেটা একটা রহস্য। যারা সেটা শুনেছে তাদের মনে অনেক নতুন প্রশ্নের জন্ম হয়েছে কিন্তু একি সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন করে আস্থা ফিরে পেয়েছে।"

-------তাই নাকি? তাহা হইলে এতগুলান লুক মরিয়া গেল... এতগুলান গ্রেনেড খোয়া গেল...সবই সাফোইল্ল্য(!)... সরকারী তদন্ত রিপোর্ট খানাও সাফল্য বটে।ইউটিউব সহ এক হালি ওয়েব সাইট বন্ধ করিয়া দেয়াও নেত্রীত্বের প্রতি প্রগাড় আস্থার বহি:প্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়! সাধারন ক্ষমা ঘোষনার পর ডজন খানেক জোয়ানকে রিমান্ডে আত্নহত্যা করানো এবং তা দেখিয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা, প্রশ্নতোলা সেনা কর্মকর্তাদের ফোর্সড রিজাইন দেয়ানো...প্রগাড় আস্থার বহি:প্রকাশ নয় তো আর কি? স্যার ইহা কি বলিলেন... ইহাই কি ইতিহাস বিকৃতি নয়?

"ছাত্রলীগ করার নামে কিছু অবিবেচক ছেলেদের সেই সুযোগ নষ্ট করতে দেয়া যাবে না।"

----------অবিবেচক(!) ছেলে...বাহ চমতকার একটি নিরীহ বিশেষন খুজিয়া লইয়াছেন উনি... মহান বিজ্ঞানীই বটে।ছাত্রলীগকে"দুষ্টুছেলের দল" বলিলেও অবাক হইতাম না।

"আওয়ামী লীগের নেতারা জানেন কি না জানি না, গত নির্বাচনের বিজয়টি এই দেশের সব প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধির মানুষেষেরা তাদের নিজেদের বিজয় হিসেবে ধরে নিয়েছে৷"
---------আর দশটা আওয়ামীপন্থী কলামনিষ্টের মতো আমাদের শ্রদ্ধেয় জাফর স্যারো আওয়ামীলীগের বিজয়কে নানা সুন্দর বিষেশনে জড়াইয়া মহোত্তম করিতে চাইতেছেন। আমার প্রশ্ন... যেহেতু ব্রুট মেজরিটি আওয়ামী সরকার পাইয়াছে তার মানে দেশের অধিকাংশ লোক... প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধির মানুষ। তাহা হইলে আগের ইলেকশনে যারা বিএনপি জামাত জোটকে ভোট দিয়াছিল উনারা কি সবাই সাম্প্রদায়িক, গোড়া লোকজন ছিলেন। এরমানে সকল সাম্প্রদায়িক, গোড়া লোকজন এখন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধির মানুষ হইয়া গিয়াছেন? জ্বিনা জনাব, লোকের হাপাইয়া উঠিয়া ভোট দিয়াছে... যেমন আওয়ামী শাসনে হাপাইয়া উঠিয়া বিএনপিকে ভোট দিয়াছিল। ইহার মাঝে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধির যোচ্চুরি অনাবশ্যক... নিখাদ ভোটের হিসাব। হিসাব না বুঝিলে ৫ বছর অপেক্ষা করুন...বুঝিয়া যাইবেন।

মোটে এক খানা কলামের কথা বলিলেন দাদা... অন্যগুলান? হুম। ভাবাইলে বড়। অসাধারন কিছু কলামও আছে।আশা করি উনার ভক্তকূল সেগুলান সংগ্রহ করিয়া...শেয়ার করিবেক। তবে পেপারে আমার পড়া সেরা কলামটি হুমায়ুন আহমেদের লিখা। সিলেট নিয়া লিখিয়াছিলেন। অসাধারন অসাধারন অসাধারন। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়া আমার পড়া সেরা লেখাটিও হুমায়ুন আহমেদেরই লেখা “অনীল বাগচির একদিন”।এই সুচিক্কন উপন্যাসটি নিয়া একখানা শর্ট ফিলিম বানাইবার স্বপ্ন আমার বহুদিনের।লেখককে তার ব্যক্তিত্ব দিয়া নয় বরং বক্তব্য দিয়া বিচার করি—সেই কামনা রইল।
-----------------------------------------
অন্যান্য লেখা, খুচা দিয়া পড়েন
ব্যানানা বাংলাদেশ-৪ (কি চমেতকার দেখা গেল!)
ব্যানানা বাংলাদেশ-৩ (গডফাদারের স্টিমুলাস মূলা)
ব্যানানা বাংলাদেশ-২ (প্রথম আলোর ইহুদীডিম্ব!)
ব্যানানা বাংলাদেশ-১ (ইকোনমিক হিটম্যান)
কন্সপিরেসি থিওরী-পারট ৩ (সিউডো-জ়ঙ্গি রাষ্ট্রের ছায়া)
----------------------------------------------
বাংলাদেশ: কিরম আস?
আমার বউ কই?

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৩

২টি মন্তব্য:

© ডিউক জন বলেছেন...

আহা, করেছেন কী! আপনি তো রীতিমত স্যারের ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ছাড়লেন! ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত নয়খানা অশ্বডিম্ব! অথচ এই মানুষটাই আমাদের বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে বোঝাতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন। হিপোক্রিট আর কাহারে কয়!

ভাল লাগল আপনার বাড়ি। মাঝেমাঝে এসে ঘুরে যাব।

বাঙ্গাল বলেছেন...

@ডিউক জন : ধন্যবাদ ...তুমার বাড়ি গেছিলাম...ব্লগস্পটে ...সামুতে জিতে পারি নাই ..