৮ জুন, ২০১০

ফেইসবুক ও পাঠকের শক্তি


ফেইসবুকে লেখালেখির শুরু কর্ছিলাম সেপ্টেম্বর ২০০৮ এ। আজকে ২০১০ এর জুন। আজকের নোটটা ৮৭ তম। শুরুটা ছিল এক্কেবারেই ঘরোয়া প্রবাস জীবনের রান্না বান্না-কান্না, ভ্রমণ- জীবণ দিয়ে। কিন্তু পরে আর লেখালেখি রান্না ঘরে থাকতে পারে নাই। কারন মাঝে অনেক কিছুই ঘটছে।

একটা আধাখেচড়া মিলিটারি সরকার গদি ছাড়ছে। মেলা নাটকের পরে ইলেকশন হৈছে। ইলেকশনের সময়টা চুপ থাকা যায় না। কারন তখনি সবচেয়ে বেশি মিথ্যা তৈরী হয়, আদর্শের বেচাকেনা হয়। চুপ থাকা যায় না।

চুপ থাকতে পারি নাই যখন মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশায়ে সত্য করতে চায় প্রতিষ্ঠিত দৈনিক পত্রিকারা (প্রথম আলো)। ২৫ বছর চুপ ছিলাম। আর না। এখন ফেইসবুক আছে...অভ্র আছে...কিছু লিখে ফেলা যায় চট করে। সবাইকে জানানোও যায়। দেশের নামে যখন মৌলবাদী তকমা পড়ে ইন্টারন্যাশনাল হার্ভার্ড বিভিউএ ... তখন আর বসে থাকা যায় না। সেটা যেই লেখুক...আমি তারে ছিড়েফুড়ে ফেলতে চাই আমার ফেইসবুক খাতায়। তাতে আমি রাষ্ট্রের চোখে দেশোদ্রহীতা হইলেও কিছু যায় আসে না। কারন সমর্থন পাবার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না...দেশ বিদেশ থেকে সমমনারা লাইক, কমেন্ট দিয়ে সমর্থন জানায়।

২দিনের নানা নাটকের পর যখন পিলখানায় বিডিয়ারের বিদ্রোহ ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যায় আর প্রতি দিন লাশের হিসাবে গরমিল হয়... তখন আবারো আমরা লাশ গুন্তে বসি। সরকার ও সেনাবাহিনীর দেয়া গোজামিল গুলো নিয়ে কনস্পেরেসি থীওরী লিখি। এতগুলান লোক সারা দেশের কড়া নজরের মধ্যে মরে গেল...আবার হাজার খানেক পালিয়েও গেল...ফাইজলামো নাকি? সবচেয়ে বেশি তর্ক বিতর্ক হয় সেই সময়টাতে। সরকার অতটা সহিষ্ণু ছিল না। তারা ইউটিউব, মিডিয়া ফায়ার বন্ধ করে দেয়।

এরপর তেল গ্যাস নিয়ে অনেক হাঙ্গামা কর্লাম। অনেকের লাফছাপের পর...শেষ পর্যন্ত সরকারকে সমুদ্রসীমানার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানো গ্যাছে। শেষ রক্ষা হলে হয়।

এরপর ক্যানো জানি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের মাথায় পোকা ঢুকলো। তারা বুঝলো ফেইসবুকেই সব ফাজিলের আস্তানা...সেখানেই তাদের সব অন্যায়ের বিপক্ষে জনমত গঠন হচ্ছে। সুত্রাংম কাটো মাথা। আমি টিভিতে ফেইসবুক বন্ধের খবরটা টিভির আগেই পাইছি..... মোবাইল ফেইসবুকেই। ভ্যান গাড়িতে বসে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্রাউজ কর্ছিলাম। টিভিতে শুনার আগেই ফেইসবুকেই এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখলাম সবার মাঝে। আর কোন দিন সরকার এই দুঃসাহস কর্বে বলে মনে হয় না।

মাত্র ১ সপ্তাহ। সরকার আর ফেইসবুক বন্ধ রাখতে পারলো না। তারা আমারদেশ বা যমুনা টিভি, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে যতটা জনপ্রিয়তা হারাইলো...ফেইসবুক বন্ধের ঘোষনা দেয়া মাত্র, তারচেয়ে বহুগুন পাব্লিক পচানি খাইছে। বিশ্বাস হয় না? প্রমান আছে। আমারদেশের সম্পাদককে সাজানো নাটক করে গ্রফতার করে এখন এটা সেটা নানান মামলায় জড়িয়ে আবার ৮ দিনের রিমান্ড নেয়া হয়েছে। শ খানেক সাংবাদিককে চাকরী ছাড়া করা হয়েছে। আবার একটা গণ মামলা দিয়ে সবাইকে দৌড়ের উপ্রেও রাখা হোইছে। কৈ...এত বড় অন্যায়ের পরেও সরকার দিব্বি রিমান্ড, গ্রেফতার চালাচ্ছে। অথচ ফেইসবুক বন্ধ করে সরকার ৭দিনও থাকতে পারে নাই। কাউকে গ্রেফতার না করেও...কারো কোন ভোগান্তি না দিয়েও...ব্রুট মজরিটির সরকার হঠাত জাতীয় ভিলেন হয়ে গেল। বাকশালের গালি হজম করতে হইলো?

সারাদেশে সুলভ ইন্টারনেট আর মোবাইল নেটওয়ার্কই হবে সবচেয়ে বড় মিডিয়ার শক্তি...টিভি চ্যানেল বা সংবাদপত্র না। জনগনই হবে দেশের প্রধান বিরোধীদল। এখনো হয়ত ইন্টারনেট অতটা জনপ্রিয় হয় নাই গ্রামে গঞ্জে। কিন্তু সেই দিন দূরে নাই যেদিন প্রত্যন্ত গ্রামের কোন কৃষক "সার দে হারামজাদা" স্ট্যাটাস বা টুইট দিয়ে সারাদেশে হৈ চৈ ফেলে দিবে।

ডিজিটাল সরকারকে ধন্যবাদ। ফেইসবুক বন্ধ না হলে আমরা ফেইসবুকের শক্তিটা পরখ কর্তে পারতাম না। এখন বুঝতে পারি...আমাদের কমেন্ট শেয়ার, লাইক, নোট, লিঙ্ক এগুলাই আগামী কালের গণতন্ত্রকে আকৃতি দেয়। শুধু এন্টারটেইন্মেন্টই না, ফেইসবুককেই আধিকার আদায়ের হাতিয়ার বানান। শাসকের দল আপনাকে তখনি ভয় পাবে, যখন আপনার আওয়াজ সারা দুনিয়ায় শোনা যাবে।

রাজা হবুচন্দ্রের সহিত বাঙ্গাল

একদা রাজা হবুচন্দ্রের দেশে স্বাদু জলের বড় আকাল পড়িল। দীর্ঘদিন বারিষ হয় না। মাঠের ফসলাদি জলের অভাবে বিনাশ হোইল। এমতাবস্থায় রাজ্য ত্রান সাহায্যের বড় জরুরত পড়িল। জলের অভাবে চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। প্রজাগণ রাজসভার হর্তাকর্তাদিগের নিকট ত্রানের আশায় নানান দাবি-দাওয়া তুলিল। রাজসভার সকলের এই ঘোর দূর্দিনে কোষাগার উন্মুক্ত করিয়া লঙ্গরখানা খুলিবার ব্যাপারে সম্মত হৈলেন। কিন্তু হাড় কিপ্টে রাজা হবুচন্দ্রেকে একথা কে বলিবে?কাহার ধড়ে দুইখানা মাথা! কেহই সাহস করিয়া উঠিতে পারিল না। সকলে মিলিয়া বাঙ্গালকে ছাই দিয়া ধরিয়া বসিল। বাঙ্গাল কিছুতেই তাদের না করিয়া পিছলাইতে পারিল না। রাজসভায় সস্তা বিনোদনের কাজ ছাড়া আর কিছুই সে পারে না বলিয়া দূর্নাম আছে। এবার তা ঘুচবে...সেই আশায় এই দুঃসাহস করিতে রাজি হৈল বাঙ্গাল।

কিন্তু রাজসভায় কথা পাড়িতে গিয়া বাঙ্গাল বুঝিল, ইহা মোটেও ছেলে খেলা নয়। তাহার হাটু কাপিয়া উঠে...গলা শুকাইয়া যায়। কিপ্টে রাজা গেল বছর ফেরিতে ডুবিয়া মরা সকল পরিবারকে একখানা করিয়া ছাগলের রশি দিয়া বাড়ি পাঠাইয়াছিল। জলের অভাবে এখনো কেউ মরে নাই...অবশ্য মরিতেও দেরি নাই। এবছর না মরলেও আগামী বছর না খেয়ে আদ্দেক মরবে নিশ্চিত। বাঙ্গাল ভাবিল...সোজাসাপ্টা রাজকোষ খুলিবার কথা বলিলে জুতো ছাড়া কিছুই মিলিবে না। তাই সে অনেক ভাবিয়া ভিন্ন পথ নিল।

পরদিন রাজসভার প্রভাতী অধিবেশনে বাঙ্গাল একখানা পুরনো ময়লা ধুতি... হাটুর কিছুটা উপরে পড়িয়া আসিল। সকলে মুখ টিপাটিপি করিয়া হাসিতে লাগিল। সবার পরনে চকচকে কাপড়চোপড়ের মাঝে মলিন বিমর্ষ বাঙ্গালের সুচিক্কন কৃষ হাটু বড়ই বেখাপ্পা লাগিতেছিল। ব্যাপারখানা রাজা হবুচন্দ্রের নজর এড়াইলো না। বাঙ্গালকে ডাকা হৈল।

"কিরে তোর কি হইয়াছে? ধুতিখানাও ঠিক মতো পড়িতে শিখিস নাই?" রাজা শুধান।
- জ্বী রাজা মশায়। বেয়াদপি লিয়েন না...আজ্ঞে রাস্তা ঘাটে বড্ড ধুলোতো তাই উঠিয়ে রেখেছি এক্টূ
"ক্যানো রে...ধুলো লাগ্লে ধুয়ে ফেল্লেই তো হয়...হেহে"... চারিদিকে হাসিতে কয়েকজন একে অপরের উপরে এলাইয়া পড়িল।
- "আজ্ঞে কাপড় ধোয়ার সাবানতো বাসায় রয়েচে...কিন্তু জল নেই"
- "বড় হাসালিরে...তোর বাসায় জল না থাকলে ধোপার কাছে দে..."
- "রাজা মশায়...আমার ধোপা গতকাল জল খাইতে না পাইয়া তেষ্টায় মারা গেছে"

চারিদিকে নিরবতা পড়িল। হবুচন্দ্র ক্ষিপ্ত হোইয়া তাহার ডিজিএফাইকে ডাকিলেন "প্রজারা পানির অভাবে মরিয়া জাইতেছে তোমরা আমায় সেই খবরটা দিতে পারিলে না...আমাকে শুনিতে হৈল নটাঙ্গি বাঙ্গালের কাছে...তাও আধা ঘন্টা নাটক করিবার পর!"

ডিজিএফাই বাহাদুর বিশাল গোফ নাড়ীয়া বলিলেন "খবর নিবার জন্য ঘোড়সাওয়ার পাঠাইতে চাইয়াছিলাম...কিন্তু রাজপ্রসাদ হৈতে এতটা পথ যাইতে ঘোড়ারো পানি খাইতে হয়...উহা পাইব কোথায়?"

পরদিন রাজা হবুচন্দ্র রাজ্যে নিয়ম জারি হোইল "প্রকাশ্যে কাপড় ধোয়া নিষেধ। ধুতি হাটুর উপরে পড়ীতে হবে"...লে হালুয়া!

------------------------------------------------------------------------------
এতটুকু স্বপ্ন দেখবার পরে বাঙ্গালের ঘুম ভাঙ্গল। হবুচন্দ্রের দেশে নয়...নিজের বাংলাদেশে। ফ্যানের পাখা ঘুরছে...কারেন্ট গেলেও সমস্যা নাই...আইপিএস আছে। রিমঝিম বরষাও এসে গেছে। কাথামুড়ি দিয়ে কষে ঘুম দিল সে। বাংলাদেশের সব মানুষই এখন আরামে ঘুমুচ্ছে। বিদ্যুত নিয়ে তারা আর ভাবে না। এ বছরটা না হয় গেল। আগামী বছর গ্রীষ্মে? একদিকে সরকার এডিবির ঋণে গ্যাস পাইপ বসিয়ে যাচ্ছে। গ্যাস কোথায়? পাচ বছর আগে আমরা খাম্বা পুতেছি। এখন বিদ্যুত নাই।
দুইকোটি মানুষের কংক্রীটের জঙ্গলে কি শান্তিতেই না আমারা আছি। ১১৭জন পুড়ে মরেছে? দুই দিন চুক চুক করে ঢাকাবাসি। আরো ডজন খানে ভবণ ধসে মরেছে? আহারে। ওরা অভাগা ছিল। আমিতো বেচে আছি। দামি ফ্লাটে আছি...লক্ষাধিক টাকায় কেনা...হুহু...হেল্বে না ফাটবে না...ভূমিকম্প? সেটা আবার কবে হয়েছিল?

ঢাকাবাসি আবার ঘুমায়। আগামী বছরের চিন্তা কে করে? আগামীকালের চিন্তাইতো মাথায় আসে না। হবুচন্দ্রের দেশে সবাই সুখেই থাকে। যাদের সুখ শেষ হয়...তারা মারা যায় বা পুড়ে যায় বা কোথাও মাথা থেতলে চাপা পড়ে থাকে...শিয়াল-শকুনেরা তাদের খোজ পায়। ঢাকাবাসী তাদের খোজ রাখে না।