২৩ ডিসে, ২০১৪

যারা অস্ট্রালিয়াতে পড়তে আসবেন

পড়তে যারা আসবেন তারা খেয়ালে রাখবেন আপনি যত চখাম স্কলারশিপেই আসেন, আপনি এইদেশে একজন নিম্নবিত্তের সমান স্যালারি পাবেন। ইয়েস, নিম্নবিত্ত। সুতরাং, অলিগলি না যাইনা ডাইভ দিবেন না। ডলারং কিপ্টোং তপঃ


১. আসার আগে উস্তাদ (সুপারভাইজার) কে মেইল দিয়ে আগাম ফ্লাইট ও প্রথম দেখা করার সময়, তারিখ ঠিক করে নেন। অস্ট্রালিয়া আসার পরে ইমেইল এক্সেস কবে পাবেন ঠিক নাই। প্রথম মোলাকাত মানেই স্যালারি শুরু। আসার পরে শুইয়া বইসা সময় নষ্ট না কইরা আগে উস্তাদের সাথে দেখা করে রেজিস্ট্রেশন করে নেন। এরা একদিনে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলে। সকল ফাইল-পত্তর (স্কলারশিপের কাগজ) আর কলম নিয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হোন।



২. আসার আগে শপিংঃ

অস্ট্রালিয়াতে কোন কিছুই সস্তা না। সুতরাং দেশ থেকে পর্যাপ্ত আন্ডার গার্মেন্টস (নারী ও পুরুষের আন্ডারগার্মেন্টসের বেপক দাম), গার্মেন্টস, দাড়ি কাটার রেজার, গ্রুমার, কটনবাড সবকিছুর দাম বেশি। পোষাকের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে, খুব শীতের কাপড় (জ্যাকেট, হুডি, সোয়েটার) এর পাশাপাশি গরমের কাপড়ও আনা উচিৎ। এদের হুট করে গরম পড়ে। লুঙি, পাজামা, সকস লেন। এইখানে হররোজ ছিটা বৃষ্টি পড়ে। ছাতা আনতে পারেন। প্লাস্টিক মারা হুডি লইতে পারেন যা বৃষ্টিতে চুপ্সাবে না। এরপরেও অনেক্কিছুই কিনতে হবে, শুরু করেন চায়নিজ দোকান থেকে। এরপরে শপিংমলে ঢুকেন।  


আরেকটা জিনিস- পিসিতে প্রচুর পাইরেটেড সফট লিয়ে নেন।
সস্তা জুতা কিনবেন না। সস্তা স্যান্ডেল এইখানে চলবে, কিন্তু শীতের জুতা পোক্ত হওয়া চাই। মাঝে মাঝে এডিডাসে সেল দেয়, ৫০/৭০ডলারের জুতা খুব কামের। ১৫ ডলারের জুতা ৫টা কিনা ১বছর কষ্ট করার চেয়ে ৫০-৭০ডলারের একটা ব্রান্ডের জুতা ভালো আরাম দিবে।  


৩. আসার আগে বিদায়ঃ
অবশ্যই পুরান সুপারভাইজারদের সুন্দর সালাম দিয়ে আসা উচিৎ। পিছে কোন কাজ বাজায়ে নিয়ে আসা উচিৎ হবে না। এক্স-উস্তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা ঈমানি দ্বায়িত্ব। দুনিয়াটা ছোট, একাডেমিয়া আরো ছোট। কারে কখন লাগবে কে জানে। আপনার পিএইচডির পেপার যে এক্সউস্তাদের কাছে যাবে না তার গ্যারান্টি নাই।


৪. অস্ট্রালিয়ার ফ্লাইট অনেক লম্বা। ফ্লাইটে শুকনা খাবার ব্যাগে রাখেন। ল্যাপটপে ভালো মুভি রাখেন।


৫. আসার পর



-মোবাইল: যোগাযোগ ছাড়া মানুষ এখন বাঁচতে পারে না। ঘনঘন পুটপুট করা চাই। ফোনে প্রচুর চার্জ দিয়ে প্লেনে উঠেন। অস্ট্রালিয়াতে আসার পরেই ছেলেপেলে প্যাকেজে সুন্দর স্মার্টফোন কিনে ধরা খায়। আমিও আইফোন ৩কিনেছিলাম, কোন টাকা ছাড়া। মাসে ২৯ডলার বিল। খুব খারাপ জিনিস। ২বছর বান্ধা সার্ভিস। পরের মাসেই দেখা গেল আইফোন ৪হাজির। প্রথম মাসে দেশে কথা বলে লিমিটের উপরে যাওয়াতে বিল আসলো ৮৬ডলার। মার্ডার। এক একজনের কথা বলার হ্যাবিট এক এক রকম। কেউ বেশি পকপক করে, কেউ কম। কারো দেশে বউ আছে, কারো অনেক অনেক গার্লফ্রেন্ড। সুতরাং আমি কোন সলিউশন দিতে পারতেছি না। তবে কেউ ২বছর বান্ধা সার্ভিসে সাইন করার আগে শুরুতে একটা সহজিয়া সিম কিনে বাজার যাচাই করে পছন্দ সাধ্য সক্ষমতা মাফিক প্যাকেজ নিলে ভালো করবেন।


আসার পরেই নেয়া উচিৎ Lebera, Lyca mobile, GT mobile, গোটক
কোন প্যাকেজ নাই। ১০ডলার ভরে দেশে পকপক করা যায়। টাকা শেষ, কথা শেষ। বেশি বিল আসার চান্স নাই।


প্যাকেজ হিসাবে ভালো সার্ভিস-
TPG, OPTUS, VODAPHONE এগুলার সার্ভিস আবার এলাকাভেদে উঠানামা করে। আপনার এলাকার সেরা নেটওয়ার্ক বেছে লিন।


-ইন্টারনেটঃ বাসায় ইন্টারনেট শুরুতে না নেয়াই ভালো। ধীরে চলো নীতিতে এলাকার সেরা সার্ভিস ও প্যাকেজ বেছে নিন। তবে, ইন্টারনেট বাসায় লাগাইতে হপ্তা দুই সময় লাগে। যারা ফ্যামিলি সহ আসবেন, তারা দ্রুত এপ্লাই করেন। এদের ইন্সটলেশন সার্ভিস খুব স্লো। দেশটা বড়, কামলা কম, সার্ভিস ঢিলা।


-আবাসন
এই দেশের প্রধান খরচের খাত আবাসন। অবিবাহিতরা শেয়ার্ড, বিবাহিতরা ছোট ইউনিট নিতে পারেন। আবাসন খোজার সাইট-
realestate.com.au
domain.com.au
আর সবকিছু খোজার সাইট gumtree.com.au,  ebay


gumtree তে বাসা, বাসার জিনিস্পাতি, সেকেন্ডহেন্ড, ফাস্টহেন্ড---সব মেলে।


আসবার আগে খোজ নেয়া উচিৎ, ওই ভার্সিটির বাংলাদেশি ক্লাব আছে কিনা। ফেবুতে ও গুগলে গ্রুপ তালাশ করেন। পাইলে ভালো। না পাইলে পরিচিত কাউরে খোজেন। তারা আবাসনের ব্যাপারে খোজ দিতে পারে।


কিছু বিষয়-
-বাসার ছবি দেখেই টাকা দিবেন না। এইদেশে বাইরে একরকম, ভিতরে আরেক রকম বাসা মেলে। বাইরে সদরঘাট বাসার ভিতরে ফিটফাট মিলতে পারে। বাসা ভাড়া হপ্তাভিত্তিতে লেখা থাকে। ৪.৩৩ দিয়ে গুন করে মাসিক ভাড়া দেখে লিন। এডভান্স ১মাসের ভাড়ার টাকা নিয়ে আসেন।


বাসার যা দেখা উচিৎ-
ক। হিটীং সিস্টেম- হিটিং সিস্টেমের মধ্যে সবচেয়ে ভালো গ্যাস হিটীং> অয়েল হিটিং> ইলেক্ট্রিক হিটীং> বীচি হিটীং
গ্যাস হিটীং সুলভতম, আরামের মধ্যে ষোল আনা। বাকিগুলির খরচা ক্রমান্বয়ে বেশি ও আরাম কম। বীচি হিটীং হলো ছোট স্পিকারের মতো হিটার। খুব গরম বাতাস দেয়, কিন্তু পাগলের মতো কারেন্ট খায়।


খ। কুকিং সিস্টেম- গ্যাস কুকার>ইলেক্ট্রিক> ইন্ডাকশন
গ। রাস্তা থেকে দূরত্বঃ হাইওয়ে, ফ্রিওয়ে থেকে দূরে বাসা নেয়া ভালো। হাইওয়ে>রোড>স্ট্রিট> এভিনিউ এই ক্রমে গাড়ির গতি ও ট্রাফিক কম হবে।
ঘ। ক্যাম্পাস থেকে দূরত্ব- এইটাই সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট বিষয়। গাড়ি না থাকলে বাসে/ট্রেনে যাতায়াত করতে হবে। সবচেয়ে ভালো পায়ে হাটা দূরত্বে। বাট যত ক্যাম্পাসের কাছে, তত বেশি ভাড়া। উল্লেখ্য এদের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খুব সময় মেনে চলে, কিন্তু অনেক খরচ। গাড়ি বিষয়ে আলাদা করে কবো। ক্যাম্পাসের পোষ্টকোড লিখে রিয়েল এস্টেটে +১০কিমি রেডিয়াসে বাসা তালাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কাছে হইলে ভালো।
বাসায় উঠার সময় সবকিছুর ছবি তোলা মাস্ট। এই ছবিগুলি সংরক্ষন না করলে বাসা ছাড়ার সময় নানান ছুতায়, এইটা ভাংছেন, অইটা নষ্ট করছেন বইলা এজেন্ট/বাড়িওয়ালা বন্ডের টাকা খেয়ে রাখবে।

ফার্নিচারঃ
গরিব ভাইব্রাদারদের জন্য ডাম্পিং সিজন পর্যন্ত অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। এই সিজনে লোকে ফার্নিচার ফেলে দিবে। বড়লোক এলাকার ভালো ফার্নিচার নিয়ে ঘর সাজান। এছাড়া সুলভে পাবেন ‘গ্যারাজ সেল’ এর ফার্নিচার। খ্রিষ্টান মিশনারির দোকানেও সুলভ ফার্নিচার মেলে- Salvos. এছাড়া ফ্রিজ, অভেন কেনার/টোকানোর সময় স্টার দেখে নেয়া উচিৎ। কারণ বেশি পানি/বিদ্যুত খায় এমন জিনিস খাল কেটে বাসায় এনে প্রতি মাসে লস খাওয়ার চেয়ে একটু বেশি খরচা করে ভালো জিনিস কিনলে আঁখেরে লাভ।

ম্যাট্রেসঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ঘুমের শান্তির জন্য ম্যাট্রেসে বেশি খরচ করা উচিৎ। পুরান ম্যাট্রেস মানেই দুই দিন পর ব্যাকপেইন। গবেষকদের প্রধান অসুখ ব্যাকপেইন। সুতরাং, ম্যাট্রেস দেখে শুনে কিনেন।


-খাদ্য
ফ্রেশ শাকসব্জির অনেক দাম। ফ্রোজেন খাবার প্রচুর আছে। দোকানপাটে প্রচুর হারাম খাবার আছে। হালাল দেখে খাইতে চাইলে এলাকার মোসলমান ভাই-ব্রাদারদের সাথে আলাপ করে জেনে নেয়া ভালো। যেকোন দোকানে নিঃসংকোচে ইহা হালাল কিনা যাচাই করা যায়। সাদা কালো নির্বিশেষে সবাই হালাল কি বস্তু তা জানে। দেশ থেকে মসলার পোটলা আইনা এয়ারপোর্টে ধরা খাইয়েন না। এরা কুত্তা দিয়ে শোকায়। ধরা পড়লে ফাইন করে। যদি একান্তই ধরা পড়ে যান, তালে একদম নিরীহ চেহারা করে ‘সরি, আমি বুঝি নাই’ কয়ে মালামাল ফেলে কেটে পড়ুন। কোন খাবার না আনাই ভালো। ওষুধ- এসেনশিয়াল ড্রাগস (হাগার, কাশির, জ্বরের, পোড়া-কাটার) আনা উচিৎ। এদেশে ওষুধের অনেক দাম। ডাক্তার ফ্রি হইলেও তার দেখা পাইতে এপোয়েন্টমেন্ট লাগে। যাদের তামাকের নেশা আছে, প্রচুর তামাক নিয়ে আসেন। এই দেশে তামাকের অনেক দাম। বেন্সন মনে হয় ২০ডলারের উপরে।


গাড়িঃ
যারা সংসারী লোক তাঁদের জন্য গাড়ি অত্যন্ত জরুরী। গাড়ির খরচের মধ্যে মেইন্টেনেন্স, বার্ষরিক রেজিস্ট্রেশন আর তেল। বার্ষরিক রেজিস্ট্রেশন ৭৫৭ডলার (ভিক্টোরিয়া)তে। মেইন্টেনেন্সের খরচাও অনেক। জাপানি গাড়িতে মেইন্টেনেন্সে কম খরচ। ছোট পরিবারের জন্য ১.৮-২.২ লিটার গাড়ি ভালো। সিঙ্গেল ও এভেইলেবলের জন্য ১.৩-১.৮লিটার। প্রতি ০.৫লিটার বেশি গাড়ি বছরে প্রায় ৫০০ডলার বেশি খাবে। বেশি ছোট গাড়ি হাইওয়েতে ১০০কিমি/ঘন্টা গতিতে চালালে কাপাকাপি করে।


গাড়ি দেশেশুনে কেনা উচিৎ। গাড়ির দামের ব্যাপারে ভালো আইডিয়া দিবে http://www.carsales.com.au/
কিন্তু কেনার সময় দেখতে হবে ডিলার নাকি প্রাইভেট ওনার। প্রাইভেট ওনাররা কম দামে দেয়। ডিলার দেয় বেশি দামে, কিন্তু কিছুটা ভালো গাড়ি। গাড়ি টেস্ট ড্রাইভ  করে অবশ্যই রোড ওর্দি সার্টিফিকেট (RWC)সহ কেনা উচিৎ। এই সার্টিফিকেট ছাড়া কিনলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অবশ্যই কামেল লোক সাথে নিয়ে গাড়ি দেখতে যাওয়া উচিৎ।


---আপনার অস্ট্রালিয়া যাত্রা শুভ হোক। আমিন।



৩টি মন্তব্য:

ওস্তাদ জাহাঙ্গির আলম বলেছেন...

সবই বুঝলাম, এখন স্কলারশিপ খান ক্যামনে পাওন যায় সেইটা নিয়া আরেকখান পোস্ট দেন

বাঙ্গাল বলেছেন...

স্কলারশিপ পাওয়ার তরিকা খুব সহজ। শিক্ষক ধরেন। মেইল করেন। তারা সুপারভাইজ করতে রাজি হইলে স্কলারশিপের জন্য এপ্লাই করেন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু IELTS স্কোর লাগে। আর স্কলারশিপ পাবার চান্স
বাড়বে ভালো রেজাল্ট ও পাব্লিকেশন থাকলে।

বাঙ্গাল বলেছেন...

যারা স্কলারশিপ পাইতে চান
https://www.facebook.com/notes/khalid-imtiaz-saad/%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%9F-research-higher-degree-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A7%9F/10151167166267102?__mref=message_bubble