১৭ সেপ, ২০১১

বাঙ্গালের মহাদেশ ভ্রমন

1.           আগের জামানায় পিঠে চিড়া গুড় লৈয়া মুখে আল্লাহর নাম নিয়া লোকে দূর দুরান্ত চলিয়া যাইত...বাসা হইতে বাহির হইয়া প্রকৃতি দেখিয়া আগাইয়া চলিত মুসাফির.....আজকাল আর সেই আরাম নাই...ক্ষণে ক্ষণে মোবাইল বাজিয়া উঠিবে ...উধার হইতে পুছিবে- এখন কোথায়, কি বৃত্তান্ত...দিনকাল কেমন চলিতেছে... ইত্যাদি বিবিধ প্রশ্ন....আগের  মত আরাম নাই ..ইহাকে অবশ্যই বিজ্ঞানের অভিশাপ বলা যাইতে পারে 

            সম্প্রতি এশিয়া মহাদেশ ত্যাগ করিয়াচি ...তাও আবার যুগের সেরা ও ব্যাপক সাশ্রয়ী বাহন এয়ারেশিয়াতে কাপিয়া ...হ্যা পাঠক ...আমি ইয়ারেশিয়াতে চাপিয়াচিলাম নাকি ইয়ারেশিয়া আমাতে চাপিয়াছিল তা নিয়া বেহুদা বাহাসে যাইব না...তাই বললাম ইয়ারেশিয়াতে কাপিয়া...কারণ ইহা পরিস্কার যে...আমি ও হাওয়াই যান উভয় ব্যাপক কাপিয়া ছিল... মাঝ রাস্তায় আসিয়া লাল বালিকাদের বলিয়াছিলাম...প্লেনের এসি বাড়াইয়া দিতে ..."ঘেমে একদম নেয়ে গেলাম যে " ..

প্লেনের এসি কমাইয়া তেল সাশ্রয় করা যায় ...এমন থিওরি দিয়া তাহার যন্ত্রকৌশল সহকারে পাশের অস্ত্রালিয়ান যাত্রীকে বুঝাইয়া বলিলাম ...মহিলা আমার দিকে ব্যাপক বিস্ময়ে চক্ষু বড় করিয়া কহিল "রিয়েলি?"  ..আমি বলিলাম ...আলবত!

          বাকিপথ আমাকে নানান প্রশ্ন করিয়া ব্যতিব্যস্ত করিয়া রাখিল সে ..প্লেনে খাবার না নিয়া ৩০ রিঙ্গিতে মিডিয়া প্লেয়ার নিয়া চলচীত্র দেখবেন ...আর বাঙ্গালের নিকট খাদ্যই  প্রধান  বিনোদন...যাহার যা অভাব ..হেহে ...খাবারের সাথে  কিঞ্চিত  চাপাবাজি  হইলেই  আমার সময়  দিব্বি  কাটিয়া যায়.....যাহোক মহিলা ফ্রিতে একখানা মুভি দেখাইল ...৮ ঘন্টা হওয়ায় ভ্রমণের ২ ঘন্টা কাটিয়া গেল চামে:)


          ৬ ফুটিয়া দেহ লৈয়া ইয়ারেশিয়ার চাপা সিটে ৮ ঘন্টা বৈসিয়া থাকার পর যখন অসিদেশে নামিলাম...নিজেকে বেশ কারামুক্ত বলিয়া ভ্রম হইলো ...ভ্রম বলিলাম কারণ -জীবন একখানা  মস্ত কারাগার ...কারো সেল্খানা ক্ষদ্র...কাহারো বড়

          দেশ হিসাবে অস্ট্রলিয়া কেমন তাহা বলিতে পারি না ...তবে শহর হিসাবে ১ম খেতাব জেতা মেলবর্র্ন যে কোনো উপায়েই সেরা তালিকায় থাকিতে পারে না ...তাহা আমি হলপ করিয়া বলিতে পারি ...নিশ্চয় সুক্ষ্ম কারচুপির আশ্রয় লইয়াছে অসি ভ্রাতারা ...মেলবর্ণের প্রধান সমস্যা ইহার আবহাওয়া ...বর্র্ণচোরা গর্গিটির ন্যায় এর আকাশে রং ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায় ...সেই সাথে তাপমাত্রা ...থার্মোমিটারের পারদ স্তম্ভে এখাবে বিন্দু মাত্র স্বস্তি পায় না ...সর্র্বদা লাফালাফি করিতেছে ...সকালে শীত, বিকালে গ্রীষ্ম, রাতে  বর্র্ষা... ঋতুগুলান যেন প্রতিদিন পারমুটেশন কম্বিনেশন করিয়া বিন্যস্ত হয়

           শেখ হাসিনাকে নোবেল দিবার জন্য তদ্বির না করিয়া ...ঢাকার অবস্থান  ১৩৮ হইতে  উপরে তুলার জন্য মাল-পানি ঢালিলে শির্র্ষ শতকে স্থান পাওয়া আমাদের জন্য তেমন কঠিন হইবে না!
জয় বাংলা !

2. এয়ারপোর্টে নামিয়া কিছু নাদুস নুদুস কুকুর আমার ব্যাগ শুকিলো...হাড়গড় কিছু না পাইয়া তারা অন্ত্যত্র তালাশ করিতে লাগিল ...চেকআউট করিতে সময় লাগিল না...সেলাম ঢুকিতে ঢুকিতে বিদায় জানাইয়া দিল

আমাকে লইতে যে বেয়ারা ড্রাইভার আসার কথা...তাহাকে কথাও দেখিতে পাইলাম না ...কিছুক্ষণ ইতস্তত ব্রাউনিয় কনার ন্যায় পায়চারী করিয়া দেশে ত্যক্ত হইয়া ফোন করিয়াল তল ফ্রি নাম্বারে... বলিল ১০ মিনিটে পৌছাইয়া যাইবে গাড়ি ...ঠায় দাড়াইয়া থাকেন ..."ওক্কে ফাইন "    

ড্রাইভার একখানা আইফোন হাতে বকবক করিতে করিতে ১০মিনিট পর আমায় খুজিতে লাগিল ...হাতে একখানা কাগজে আমার বিশ্ব্বিদ্দ্যালয়ের নাম লেখা ...আমি এক খানা এসেমেস চাপিতেচিলাম...গরিবের বন্ধু নকিয়া ফোনে ...সুরুত করিয়া তা পকেটে ভরিয়া রাখিলাম... মান-ইজ্জ্বত-খান্দান আর অবশিষ্ট রহিলো না দেখি! এখানে বাসের ড্রাইভাররা এমন চোস্ত ইংরাজি বলে ..যা আমাকে ব্যাপক ভাবাইল...ইহারা বাস না চালাইয়া...আমাদের দেশে IELTS কর্র্স করাইলে সাইফুরস স্যার ব্যবসা গুটায়তো, নিশ্চিত!

১ সেপ, ২০১১

শহীদ মিনারে হবে ঈদ, আবুল তুমি গাও গীত-১

মেলাদিন কিছু লেখি না...তাই হাত গরম পোষ্ট । ঢাকাইয়া বুদ্ধিজীবি সমাজের একটা বড় সমস্যা, এরা ঢাকার বাইরে ভাবতে চায় না। যেমন ঢাকায় ১০ ঘন্টা কারেন্ট না থাকলে তাদের কলমে বজ্র ঝরে...কিন্তু গ্রামে যখন দিনে ১০ঘন্টা কারেন্ট থাকে তখন তারা নিরব থাকেন। তারা উন্নত জীব, কারন তারা পত্রিকায় লেখেন--গ্রামের লোকে তাদের জন্য ফসল ফলাবে ক্ষেতে খালায়, গরমে ঘামাচি ফুটাবে...সেইটাই তাদের নিয়তি। এইবার ঈদে আন্দোলন করতে চান তারা।সুন্দর পরিকল্পনা। শহীদ মিনারে যারা যাবেন (যদি মন্ত্রীসাব আজকে চান রাইতে পদত্যাগ না কৈরা ফেলেন), তাদেরকে ঈদ মুবারক। তবে উনাদের এই অভিনব আন্দোলনের দাবিগুলাতে আমার কিছু গ্যাটিস চিন্তা সাপ্লাই দেয়ার ইচ্ছা আছে।
আসল আবুল দূরে বৈসা মজাক দেখতেছে

উনাদের দাবিসমূহ:

এক. আমাদের প্রধান দাবি ৩১ আগস্টের মধ্যে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদচ্যুত করতে হবে।
দুই. অবৈধ লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
তিন. সড়ক ও পরিবহন সেক্টরের দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চার. গণপরিবহন ব্যবস্থায় দ্রুত শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
পাঁচ. সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনটি কঠোর করতে হবে।
ছয়. চালকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাত. সড়ক ও পরিবহনসহ প্রশাসনের সবস্তরে কার্যকর জবাবদিহিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (লিঙ্ক )


মূলদাবি যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগকে আমার কাছে অগুরুত্বপূর্ন মনে হয়, যদিও উনার পদে থাকার কোন যোগ্যতা নাই। তবে দেশের ঢাকাইয়া বুদ্ধিজীবি সমাজ জেমতে তারে চাইপ্পা ধর্তে চাইতেছে তাগো কলামে, চোপাতে...আমার কাছে সেইটা আজাইরা মনে হয়। এই মন্ত্রী গেলেও রাস্তাঘাটের তেমন কোন উন্নতি হবে না...যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুই পরিবর্তন হবে না। তাই মন্ত্রীর গদি ধৈরা টান দেয়ার চেয়ে পুরা যোগাযোগ ব্যবস্থার (সড়ক-রেল-নৌপথ) সমস্যা নিয়া ভাবা উচিত...এবং আরো গুরুত্বপূর্ন সাজেশন সরকারকে দেয়া উচিত। কিন্তু আফসোসের বিষয়, শুধুমাত্র আবুল সাহেবের নিকুচি কইরাই বুদ্ধিজীবি ও সোশাল সুশীল সমাজ (ফেইসবুক ঘরনা) তাদের সমস্ত গলার রগ ফুলায়া ফেলতেছেন। বুদ্ধিজীবিদের কলামে তারেক মাসুদ ও আশফাক মুনীরকে (আল্লাহ তাদের আত্মার শান্তি দিন) হারাবার বেদনাই প্রকট...বুদ্ধির চর্চা নাই। সড়ক নিরাপত্তা দিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না। আমার মনে হয় ৩টা গুরুত্বপূর্ন ইস্যুকে আরো শক্তভাবে এড্রেস করা উচিতঃ

১। রেল ও নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থায় সরকারী ইনভেস্টমেন্ট ও তার ব্যবহার ২। সড়ক রক্ষনাবেক্ষন বাজেট ঘাটতি পূরনে পরিপূরক ব্যবস্থা ৩। ট্রানজিটে ভারতের কাছে প্রতিটি রুটের জন্য পর্যাপ্ত টোল আদায় করা যা "রোড ফান্ডে" ব্যবহার করা যাবে

উনাদের দাবিগুলা শুধু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে, কিছু চালকের বিরুদ্ধে। আর ট্রানজিট উনাদের কাছে একটা এলিয়েন ইস্যু। কিন্তু উপরের তিনটিই সড়কের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত বিষয়---যার উপরে নির্ভর করতেছে আগামী ১০ বছরে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হবে, নাকি শুধু মন্ত্রীর পরিবর্তন হবে।


ঈদ মুবারক। (চলছে চলুক)