১৫ নভে, ২০১০

রাষ্ট্রযন্ত্রের স্ক্রু ঢিলা

দেশে আচমকা কেওয়াজ লাইগা যাওয়ায় একটু ঘন ঘন টিভি দেখতেছিলাম...গ্রামে থাকার কারণে শুধু মাত্র খাস বিটিভি সংবাদ দেখতেছিলাম. গতকাল দুপুর ২টায় আমি যখন ইন্টারনেটে খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়া নিয়া কেঅয়াজের খবর পড়ি...তখন বিটিভি সংবাদে প্রচার করছে "খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন" বরাত আইএসপিআর ...নামটা কি চিনা চিনা লাগলো পাঠকের? জ্বী, এক সময় এই আইএসপিআর এর খবর রেগুলার টিভিতে দেখছেন. পিলখানার ঘটনায়. আইএসপিআর বিডিয়ারের ঘটনাতেও পাক্কা তিন দিন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে ...সুতরাং এই সরকারের আমলে তাদের হাচা কথা বলার রেইট প্রায় শুন্যের কাছাকাছি.

বাসা খালি কইরা তারা বলল ..."বাসাটি এখন পুলিশের হেফাজতে আছে"...ক্যান বাবা? ক্যান্তন্মেন্তের ভিতরের বাসা পুলিশ হেফাজত করব ক্যান ? আবার কিছুক্ষণ পরে...জানা গেল..বাসার ভিতরে সাদা পোশাকে সামরিক বাহিনীর লোকজনই পাহারা দিতেছে.. ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়ির নিয়ন্ত্রণে আছে... এই কথাডা কইতে এত শরমের কি আছে?

এরপরে আসলো খালেদা জিয়া কান্না ভরা প্রেস কনফারেন্স. পাবলিকের মনে প্রশ্ন: এইটা কি আসল কান্না? 
বাংলাদেশের এমন কোনো মেয়ে নাই ...যে একটা বাড়ি(ঢাকা শহরের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গায়) হারানো সহজে মাইনা নিতে পারবে...তার যতগুলান বাড়িই থাক ...সুতরাং খালেদা জিয়া হঠাত উদার হইয়া সুরসুর করে বাড়ি ছাইড়া দিবে ...তারে নিয়া আমি এইরকম উচ্চাশা করি না ..আফটার অল আমি নিজের দেশের মা-বোনদের অন্তত চিনি ...৩৮ বছরের ব্যবহৃত বাড়ি ফেলায়া আইসা কানবো না এইরম বাংলাদেশী  মাইয়া আমি কল্পনাও করতে পারি না

গতকাল যে নাটক ক্যান্টনমেন্ট মঞ্চায়িত হৈছিল, তা ছিল পুরাপুরি সামরিক বাহিনীর "রাজনীতি মুক্ত" থাকার প্রয়াসের সফল প্রতিফলন...সে জন্য আইএসপিআর মিথ্যা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে...আর তাদের দোসর "ব্যাপকমাত্রায় স্বাধীনতা ভোগকারী" পত্রপত্রিকা তা ফলাও করে প্রচার করে...তারা তিনটা বেসামরিক ট্রাক সাজায় রাখছিল বাড়ির সামনে...এটাও নাটকের একটা অংশ...আমি খুব খুশি হইতাম ...যদি বাংলা ভাই ধরার মত ...টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট করত... কিন্তু আফসোস ...আজ ক্যান্টনমেন্টের কোনো টিভি ক্যামেরাও যেতে দেয়নি সেনাবাহিনীর কড়া সামরিক প্রহরা... কারণ ওনাদের ভয়... এই ব্যাপক গণতান্ত্রিক সরকারের পোশাকের আড়ালে যদি সামরিক উর্দিটা ধরা পরে যায় আম জনতার চোখে

আমার আফসোস বেশিক্ষণ করা লাগে নাই, উচ্ছেদের ২৪ ঘণ্টা পর আইএসপিআরের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের নেয়া হয় সে বাড়িতে। দরজায় শাবলের চিন্হ রং-পট্টি মাইরাও মুছা যায় নাই... তবে সবচেয়ে বড় রগড় দিছেন তারা বিটিভির রাতের সংবাদে "খালেদার বাসা থেকে পর্ন  ম্যাগাজিন পাওয়া গেছে তা দেখাইল ".আইএসপিআর চরম খেলা দেখাইছে..জাতি ব্যাপক বিনোদিত ..ভিডিও দেখাইছে.
আমি এইটাও মাইনা নিতে পারি...ঐসব পাইতেই পারে ..সেনাবাহিনিত অনেক কিছুই পাইছিল "আধা সামরিক কাম তত্বাবধায়ক সরকার আমলে...ভিআইপিদের বাড়ির বাথরুমে বিদেশী শাড়ি, মদ, অস্ত্র ...তেনারা এইসব পাইতেই পারেন...অভ্যাস যায় নাই... সবকিছুর পরেও এইটা ছিল একটা বাসা ...মসজিদতো না? এইটা বিটিভিতে সারা দেশের ছোট-বড় সবার সামনে প্রচার করার মত মানসিকতা সরকারী দল ক্যান দেখাইল? ধরা যাক, উনার বাসায় দুইটা কনডম পাওয়া গেল...এখন সেনাবাহানীর দুইজন সোলজার কি সেইটা বিটিভির ক্যামেরার সামনে নাইরা চাইরা দেখানো উচিত?

এখন আসা যাক এই ঘটনার সুদুর প্রসারী খতরনাক প্রতিক্রিয়ায়

১. আজকে যেই আইএসপিআর সরকারের কথায় মিছা কথা কৈতেছে ...বিটিভির সাথে তাদের পার্র্থক্য় কি থাকলো?......এইখান থিকা তার রাজনৈতিক অভিযাত্রা শুরু হৈল...কালকে যেই গদিতে বসবে...সেই আইএসপিআর এর মাইক ভাড়া করবে প্রচার প্রপাগান্ডার কাজে ... জনগনের চক্ষেও তার রং ৫ বছর পর পর পাল্টাবে...সেনাবাহিনীর ভিতরেও এর প্রভাব ব্যাপক ক্রমিক পালাবদল তৈয়ার করবে.   পিলখানা-রূপগঞ্জের পরে, খালেদার উচ্ছেদ অভিযান সেনাবাহিনীকে আবারো কলঙ্কিত করলো

২. খালেদার সাথে সাথে তার পোলা দুইটাও নিশ্চিত কানতেছে আজকে ...যেকোনো সন্তান তার মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিবেই...যদি তার সেই ক্ষমতা থাকে ..তা সে যত বড় কুসন্তানি হোক .আজ হোক কাল হোক...এরা ক্ষমতায় আসবেই ..এবং এই অপমানের প্রতিশোধ নিবে (এদের নিয়েও আমার কোনো উচ্চাশা নাই ...এরা জিয়ার পুত্র হইতে পারে...কিন্তু জিয়া না)..এই প্রতিশোধের ভাষা গ্রেনেড কিংবা বন্দুকের গুলিও হইতে পারে ..ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটা বুলডোজার দিয়া গুরায়াও দিতে পারে ...২ বছরের সেনাশাসনের পরে এখন সবাই বুইঝা গেছে ক্যামনে আদালত চালাইতে হয়, আইএসপিআররের মাইক ভাড়া করতে হয়, পত্রিকাওয়ালাদের খামোশ রাখতে হয় (দেশে বিরোধীদলের পত্রিকা, টিভি ওয়েব্সিত সহ প্রায় হাফডজন প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে নানা উছিলায়...শুরুটা একুশে টিভি থিকা) ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসাটা জন্ম লগ্ন থিকা বাংলাদেশের রাজনীতির একটা স্বাক্ষী ...এই বাসাটারে এইভাবে হুমকির  মুখে ফেলাটা ভালো হয় নাই...সেই সাথে ক্যান্টনমেন্টের বাসাটাও একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে..৭ই নভেম্বরে এই বাসা থেকেই মুক্তি হন ... সেনাপ্রধান হওয়ার পরও এ বাড়িতেই ছিলেন জিয়াউর রহমান। এ বাড়িটি ছেড়ে সেনাপ্রধানের জন্য নির্ধারিত বাড়িতে যান নাই।৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার এই বাড়িতে গৃহবন্দী ছিলেন খালেদা জিয়া.....উচ্ছেদ করছে ভালো কথা...কিন্তু বাসাতারে সংরক্ষণ করা জিতে পারত...এইখানেই ক্যান পুনর্বাসন করতে হবে...সেনাবাহিনীর কি জাগার অভাব?  

৩. দেশের সহিংস রাজনীতির আগুনে আরেকটু ঘি দেয়া হইলো...জার ফলাফল ঈদের আগে আজকে একটা হরতাল পাইল দেশবাসী...সামনে আরো পাবে অথচ দুইটা দলের মূল সুরে কোনো পার্র্থক্ক নাই ..উদ্দেশ এক ...গন্তব্য এক ...গদি...জনগণ তাদের সেইটা বাই টার্নস দিতেছে...তারপরেও ক্যান এত দাঙ্গা ফ্যাসাদ ...এরা কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবনা?
৪. শেখ হাসিনাকে গণভবন আর খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি চিরস্থায়ী ভাবে দিয়ে না দিলে এই দেশে আর শান্তি আসবে না...দেশের শান্তি এই দুইটা বাড়ির সাথে জড়িত ...আমরা কি পারি না ..তাদের বাড়ি দুইটা দিয়া দিতে? বাপ, তোরা বাড়ি দুইটা নে, আর আমাগো একটু শান্তিতে থাকবার দে...কারেন্ট নাই, গ্যাস নাই, রাস্তায় জ্যাম, জীবনের নিশ্চয়তা নাই ...এলা একটু ক্ষান্ত দে!
৫. কিন্তু না, চলছে  চলবে    

ব্লগ থেকে পাওয়া বাড়ির ভিতরের ছবি...পাগলেও জানে এই ম্যাগাজিন ও মদের বোতল প্লান্ট করা হইছে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থদের বুদ্ধিতে

1 টি মন্তব্য:

নির্ঝর বলেছেন...

"তবে সবচেয়ে বড় রগড় দিছেন তারা বিটিভির রাতের সংবাদে "খালেদার বাসা থেকে পর্ন ম্যাগাজিন পাওয়া গেছে তা দেখাইল ".আইএসপিআর চরম খেলা দেখাইছে..জাতি ব্যাপক বিনোদিত ..ভিডিও দেখাইছে."

আমারা এতই ছাগল যে এইসব নাটক আমাদের দেখতে হয়। সত্যিই তো এইসব নেতা নেত্রীর বাসায় ২/৪ খান কনডম অথবা আস্ত একটা প্রেমিক পাওয়াও কি বিচিত্র কিছু ব্যাপার? কিন্তু টিভিতে এইসব নাটক কেন? আর নাগরিক অধিকার, নারী অধিকার, মানবাধিকারের শীৎকারকারিনী/শীৎকারকারী রা কুথায়, কুথায়, কুথায়। এযে অতি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্কেপ, প্রাইভেসির লঙ্ঘন, নারীর প্রতিসহিংসতা। কিন্তু তারা কুথায়, কুথায়, কুথায়।

শ্যাষ প্রশ্ন হৈচ্ছে, "না উঠলে কোলে করে নিয়ে যাব" এই কথা কি ইভ টিসিং এর কোনও পর্যায়েই পরেনা? যতগুলা ইভ টিসিঙ্গের ঘটোনা রিপোর্ট করা হইছে সবই তো ভিক্টিমের মুখের কথার উপ্রে বেইস কইরা। তো এক্ষেত্রে শীৎকারকারিনী ফেমিনিস্ট এক্টিভিস্ট্রা নিরব কেন? তাহাদের ভাতারবৃন্দ কি মুখে বেলুন দিয়া থাকতে বলছে?