২৬ এপ্রি, ২০১২

১৯ দিনের আন্দোলন: বুয়েট প্রসাশনের রাজনৈতিক ভূত


আজ বুয়েট শিক্ষকদের কর্মবিরতির ১৯ দিন হইলো। বুয়েটে এত নিয়মিত আন্দোলন হইতেছে যে ভুমিকা না লিখলে অনেকেই বুঝবেনা কোন আন্দোলনের কথা বলা হইতেছে . ০৬ ব্যাচের ইশানের উপর ছাত্রলীগের হামলা....ওটা শেষ হতে না হতেই আবার শিক্ষকদের কর্মবিরতি ....রেজিস্টার নিয়োগে দুর্নীতি, তদন্ত কমিটির কোন সুপারিশ ছাড়াই ০৬ ব্যাচের আন্দোলনকারী ছাত্রদের ফলাফল স্থগিত করে দিলেন ভিসি, হেলালী স্যারের বিরুদ্ধে হিজবুল তাহরীর- মৌলবাদী- জঙ্গি অপপ্রচার, ০৪ ব্যাচের শিক্ষক রানার বিরুদ্ধে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে 'হায়েনা' লিখায় হাসিনার নিরাপত্তা চেয়ে জনৈক জননেত্রী পরিষদ(dont ask me what is it) নেতা এবি সিদ্দিকের জিডি, একই সাথে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আর ছাত্রলীগের প্রতাপ, আওয়ামী পন্থী ভিসির বিশেষ এখতিয়ারে ছাত্রলীগকর্মীর ফেল করা কোর্স উইথড্র করা, যেখানে অন্য একজন সাধারণ ছাত্রের ক্ষেত্রে একই আবেদন গৃহীত হয় নি. অভিযোজগুলোর তালিকাটা অনেক বড়....  প্রতিটাই বুয়েটের ইতিহাসে প্রথম এই ধরনের ঘটনা   

চিন্তাশীল এবি সিদ্দীক সাহেবকে অভিনন্দন, হায়েনার প্রতিশব্দ খুজে বের করার জন্য। ...তবে বুয়েট ভিসি আবার ফেইসবুক স্ট্যাটাসের জবাবদিহিতা চাবেন ও ব্যবস্থা (!) নিবেন বলছেন। বুঝাই যাচ্ছে উনিও হায়েনা শব্দের মানে জানেন।

 ভিসি বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ীই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’-কে কি স্ট্যাটাস দিবে সেইটা কি ভিসির কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে?

১৯ দিনের কর্ম বিরতিতে ২টা জিনিশ বোঝা যায়।


১। আমাদের ভিসি সাহেবের খুটির জোর আছে । 

২। আমাদের বুয়েট শিক্ষকরা অনেক কিছুতে কামেল। কিন্তু তাদের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নাই। থাকলে ১৯ দিন পরেও ভিসি বহাল থাকতো না।

বুয়েটে ৫ বছরে অনেক আন্দলন দেখছি। সিনিয়রদের কাছেও শুঞ্ছি। কিছু নিজেও করছি। কিন্তু শিক্ষক-হবু শিক্ষক কেউ কোন কালে কোন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন শুনি নাই। আন্দোলন করতে হবে কুরবানির গরু জবাইয়ের মত, জবাই হবে কিন্তু পশুকে কষ্ট দেয়া যাবে না...হল ভ্যাকেন্ট করা যাবে না...১ সপ্তাহ মাঠ গরম করে ২য সপ্তাহে গেট আটকাও, ভিসি অফিস ঘেরাও, পেপারে সংবাদ, সিন্ডিকেটের মিটিং ডাকতে বাধ্য করা....

এন্টিস্পিন: তাছাড়া বুয়েটের আন্দোলন সফল করতে প্রয়োজন এন্টিস্পিন, যা আন্দোলনকে আরো গতি দিবে। এখানে এন্টি গ্রুপ হিসাবে ছাত্রলীগ আর বঙ্গবন্ধু পরিষদ আছে....সুতরাং আন্দোলন জমবেই ..অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে শিক্ষকরা ব্যবহার করতে পারছেন না । কাজের মধ্যে কাজ, পোলাপাইন্স বেকায়দায় পড়ছে। দীর্ঘদিনের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের যে বিশাল ব্যবধান হৈছে, সেইখানে সহমর্মীতার অবস্থান নাই। তাই শিক্ষকদের আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহনের তাগিদ থাকলেও, উদ্দ্যোগ নাই।অপরদিকে ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলনে নামতেও শিক্ষকদের সংকোচ। তারা নবাবি কায়দায় ঘরে বসে আন্দোলন করতে চাচ্ছেন। একসাথে বসে দুইটা পাতা বিবৃতি দিয়ে দ্বায়িত্ব শেষ। চ্যান্সেলর বরাবর পত্রপ্রেরন আর ভিসির সাথে কাটাকুটি খেলায় তাদের এপ্রোচ অনেকটা ধরি মাছ না ছুই পানি। প্রানের বুয়েট- জানের বুয়েটকে বাচাইতে যদি আপনাদের এতই আগ্রহ থাকে, তাহলে মাঠে নামেন। ভিসি অফিস ঘেরাও দিতে লজ্জ্বা করে? গেটে তালা দিতে লজ্জ্বা করে? তাহলে শহীদ মিনারে বসে অনশন করেন। নাকি সেটা অনেক ছোটলকি হয়ে যায়?

আপনারা কি আশা করতেছেন, ভিসি, প্রো-ভিসি আপনাদের কর্মবিরতির জন্য হাস্ফাস করতে কর্তে পদত্যাগ করবেন? কে কবে সেটা করছিল বাংলাদেশ? ভিসি সাহেব রাজনীতি করা লোক। উনার চামড়া মোটা ও পিচ্ছিল। যদি আজকে উনি পদত্যাগ করেন, আগামীতে দল তাকে একজন দূর্বল লোক হিসাবে মূল্যায়ন করবে। সেই ভূল উনি করবেন আশা করেন? প্রধানমন্ত্রী আপনাদের উদ্ধারে আগায়া আসবে? বাংলাদেশের প্রায় সবগুলা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন বছরে কত কিছুই না হলো। কতো লাশ পড়লো। প্রধানমন্ত্রী কিছু কর্ছে? কর্বেও না। সামনে ডিসিসির ইলেকশন নাই...আপনাদের ভোটের আর দরকার নাই ...... হাসিনার সাথে শিক্ষামন্ত্রিজির আলোচনার ফলাফল পাওয়া গেছে, শিক্ষামন্ত্রী এই আন্দোলন অযৌক্তিক বলছেন । বটে। ডাক্তাররা ধর্মঘট করলে রোগীর দূর্ভোগ হয়- তাই সেটা অনৈতিক। শিক্ষক ধর্মঘট করলে ছাত্রদের দূর্ভোগ হচ্ছে- এটাও অযৌক্তিক। এইদেশে লাশ না ফেললে আপনাদের  দাবি কেউ পাত্তা দিবে না.... ২টা গাড়ি পুড়ান, গাড়ির ভিতরে গ্রিল কর কিছু মামুলি খুচরা মানুষ.... এরপরে সেটা মাথায় " ব্যথার"কারণ হবে

আপনারা কিসের জন্য অপেক্ষা কর্তেছেন? গায়ে ধুলা না লাগিয়ে আন্দোলনের ফল আশা করেন কিভাবে? জানেন না, এইদেশে মানুষের লাশ কত সস্তা? সারাদেশ ৩দিন অচল করে কতোগুলো মানুষকে মারা হলো...সরকারের কিছু হইছে? আপনারা আগামী ১ মাস এইভাবে বিবৃতি দিয়েও কিছু করতে পারবেন না। কেউ ফিরেও তাকাবে না। বেশি দেরি করলে ফল উলটো হোইতে পারে। জুনিয়র ছাত্ররা বিরক্ত হয়ে ক্লাস শুরুর দাবি জানাতে পারে। তখন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে ছাত্ররা মিছিল করবে। পত্রিকায় বলে বেড়াবে ক্লাস বন্ধ রেখে আপনারা কন্সাল্টেন্সী করেন। সেটা প্রমান করা কি খুব কঠিন হবে ১ মাস পর?


আওয়ামীফাইড বুয়েট





ভিসি বশীকরন

১। বুয়েট খুবি ছোট জায়গা। কিন্তু এটাকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাবলে ভূল হবে। আর দশটা পাব্লিক ভার্সিটিতে ছাত্রলীগের যা করছে, সেটা বুয়েটে কেন হবে না? ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে রাতে ভোর হবার আগেই ঢাকা ভার্সিটিত মত ভিসি বদল হয়ে যাবে ...অবেলায় 
আপনাদের এই আন্দোলনের দরকার কি?
কেন এই আন্দোলন সেটা ছাত্রদের বোঝান: বুয়েটের ভবিষতের জন্য, আর ১০ দশটা পাবলিক ভার্সিটি থেকে আলাদা হবার জন্য, ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্রেডিং এর জন্য
ছাত্রদের কাছে না টানলে এই আন্দোলন সফল করতে পারবেন না. মিছিল-মিটিং কোনো লজ্জ্বার কাজ না, আন্দোলনে গতি আনতে ইভেন্ট তৈরী করতে হবে, ঘরে বসে পত্রিকায় বিবৃতি দিলে ইভেন্ট হবে না ...ওটা ফেইস্বুকীয় ইভেন্ট হবে 

২. প্রথমবারের মত অনেকগুলো পত্রিকায় বুয়েটের খবর প্রচার হচ্ছে....কিন্তু চাপ প্রয়োগ করতে হলে আরো ঘটনা তৈরী করতে হবে,রেজিস্টার নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে দিতে পারেন... বার কাউন্সিলের সাথে বসতে পারেন 

৩. প্রেস কনফারেন্স করে মানববন্ধন করতে পারেন 

৪. দেশে বিদেশে এলুমনাইরা পত্রিকায় যৌথ বিবৃতি লিখতে পারে

      আপনারা বসে থাকলেও ভিসি সাহেব বসে নাই, উনার কূটকৌশল পলাশীর আম্রকাননের রবার্ট ক্লাইভকেও হার মানাইছে.... শিক্ষকদের মৌলবাদী জঙ্গি অপবাদ দেয়ার  মত ন্যাক্কারজনক হীন প্রচেষ্টা করেছেন, আরো করবেন .... তার divide and rule পলিসিতে বিভ্রান্ত হতে পারে কিছু শিক্ষক ...যে তীব্র মানসিক সামাজিক চাপ তৈরী করার চেষ্টা উনি করছেন...তার বিপরীতে শিক্ষক সমিতি কি করছে? কাউন্টার রিয়েকশন ছাড়া আন্দোলনের ফলাফল পাবেন না 

কেন ১৯ দিন পর এই নোট লিখলাম, তার কারণ.... আমার দেখা সবচেয়ে লম্বা আন্দোলনটা ছিল ১৯ দিনের ...সনি হত্যার বিচার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় সেই আন্দোলনে বুয়েট খোলার ১৯ দিন পর আবার বন্ধ হয়ে যায় ....আপনাদের আন্দোলন সেই থ্রেশোল্ড ক্রস করেছে ....এখনি কিছু না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে  

জ্বালোরে  জ্বালো, আগুন জ্বালো 
বুয়েট ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে 


কোন মন্তব্য নেই: